খেলাফত মজলিসের প্রেস ব্রিফিং থেকে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে ৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় পল্টন কালভার্ট রোডস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফ্রিং এ দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আমির আলী হাওলাদার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য অধ্যাপক গাজী আবদুল মান্নান, শ্রমিক মজলিস সাধারণ সম্পাদক এইচ এম এরশাদ, যুব মজলিস সহ-সাধারণ সম্পাদক জামিরুল ইসলাম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন,জুলাই গণ অভুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন আকাঙ্খা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার সংক্রান্ত জুলাই সনদ- ২০২৫ চূড়ান্ত করেছে, যা সকল পক্ষের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর বাস্তবায়ন নিয়ে একধরণের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে জাতির সামনে তার বক্তব্য ও করণীয় তুলে ধরতে চাই।
তিনি বলেন, ’২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের জীবন দান ও হাজার হাজার ছাত্র জনতার ত্যাগের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে। খুনী ফ্যাসীবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার গণদাবী পূরণ সময়ের দাবী। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন-সহ অনেক ক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধিত হয়নি এখনো। বিশেষকরে সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিভিন্ন পক্ষ ছাড় দিয়ে হলেও অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, যা জুলাই জাতীয় সনদ -২০২৫ হিসেবে সাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু অনেকে চাইছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে । কিন্তু যারাই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন তারা এসব বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবাযন করবে কিনা সে বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অতি দ্রুত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। এবং জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণার আগেই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জানগণের মধ্যে একদিকে কাঙ্খিত সংস্কার নিয়ে যেমন সংশয় সৃষ্টি হয়েছে অন্য দিয়ে যথাসময়ে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমরা লক্ষ্য করলাম অন্তর্বর্তী সরকার জনপ্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গান-নাচের শিক্ষক নিয়োগে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে গেজেট প্রকাশ করেছে। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবী দীর্ঘ দিনের। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
তাই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্খা পূরণে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে নিম্নোক্ত দাবী সমূহ মানতে হবে। দাবীর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ ঘোষণা করা ও এর আইনি ভিত্তি দেয়া। ঘোষিত জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারী ২০২৬’র জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য প্রস্তাবনা হচ্ছে- (ক) জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ স্বাক্ষরের পর দুই মাসের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ-২০২৫ কে সাংবিধানিক ও আইনি মর্যাদা বা বৈধতা প্রদান করা। অথবা খ. জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় পলিসি বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্ডিনেন্স বা নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা। আর সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির Proclamation তথা সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে আশু কার্যকর করা তবে শর্ত হচ্ছে যে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোন পরিবর্তন- পরিবর্ধন ছাড়াই সেগুলো জধঃরভ (আনুষ্ঠানিক অনুমোদন) করতে সংসদ সদস্যগণ বাধ্য থাকবেন- এ মর্মে সকল দল ও পক্ষের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা।
২. পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচন করা।
৩. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের অপরাধের বিচার দৃশ্যমান করা।
৪. আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
৫. নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র, পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর ইউদ্যোগ নিতে হবে।
এসব দাবী আদায়ে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শুক্রবার দেশের সকল মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জেলা/ উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।
এরমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ- ২০২৫ এর আইনি ভিত্তি প্রদানের সুস্পষ্ট উদ্যোগ না নিলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পূরণে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।