বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের সাম্প্রতিক সময়ের হত্যা নৈরাজ্যকারীদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা মব তৈরি করছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদলের শহীদ পরিবারের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় একজন শহীদ বাবার প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু আমরা বিজয় অর্জন করলেও ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, আমি আজ থেকে ৮-৯ মাস আগে বলেছিলাম, অদৃশ্য শত্রু আছে। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে সেই অদৃশ্য শত্রু। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল, জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেবো না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এখানে যে শহীদের বাবা প্রশ্ন তুলেছেন তার সঙ্গে মিলিয়ে আমরাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একই প্রশ্ন করতে চাই।

শহীদদের বিচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও অনেক দলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এমনকি নিরপেক্ষ অনেক মানুষও শহীদ হয়েছেন দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে। আগামীতে বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে এসব হত্যার বিচার সুষ্ঠুভাবে হবে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে বিএনপি।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের সাম্প্রতিক সময়ের হত্যা নৈরাজ্যকারীদে সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা মব তৈরি করছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। সব ধরনের হত্যার বিচার যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, তার সর্বোচ্চ উদ্যোগ বিএনপির থাকবে বলে জানান তারেজ রহমান। যারা মব তৈরি করছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা খুব আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, স্ক্রিনে যাকে দেখেছি হত্যা করতে, তাকে কেন সরকার এখন পর্যন্ত অ্যারেস্ট করেনি? আমরা কি তবে ধরে নেব যে যারা বিভিন্নভাবে মব সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে, সেখানে সরকারের কোনো প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে? প্রশাসনের কোনো কারও কারও কোনো প্রশ্রয় আছে? তিনি বলেন, সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এই সরকারের কাছে আমাদের সবার প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে?

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

অনুষ্ঠানে পুরান ঢাকায় মাথা থেঁতলে হত্যাকান্ডসহ কয়েকটি ঘটনার অতিদ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একটা কথা পরিস্কার করে বলতে চাই, যে ঘটনাগুলো ঘটছে সরকারকে আহ্বান জানাব, অতিদ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদেরকে বের করে শান্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না, জাতিকে আপনাদেরকে দায়ী করবে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেয়ার সময় এসব সমস্যা তৈরি করার জন্য।

বিএনপি কোনদিন অন্যায়কে সমর্থন করে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে আর কিছুদিন ধৈয্যের সঙ্গে আপনারা অপেক্ষা করুন গণতন্ত্রের জন্যে এবং সবাইকে বিরত রাখুন কেউ যেন অন্যায় কাজ করতে না পারে। বিএনপি কোনোদিন কোনো অন্যায়কে সমর্থন করেনি। বিএনপি কখনো করবে না।বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অতীতেও করেছে এবং এবারও করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন করে একটা নির্বাচন দ্রুত চাই। কারণ গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই। আর গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন নেই বলে আজকে দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটছে, আইনশৃঙ্খলার ঘটনার ঘটনাগুলো ঘটছে, আইনশৃঙ্খলা অবণতি ঘটছে, মৃত্যু বাড়ছে, দুবৃর্ত্তরা সুযোগ নিচ্ছে কারণ তাদের পেছনের জনগনের সমর্থন নেই। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকার আসলে নিসন্দেহে সেটা শক্তিশালী সরকার হবে। তিনি বলেন, আমি আবারও এই আশার কথা বলতে চাই যে, আমরা নিশ্চয়ই সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।

ছাত্রদলের আত্মত্যাগকারী শহীদদের নিয়ে একটি পুস্তক তৈরি করার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে শহীদদের যথাযথ সন্মান দেবে। জুলাই-আগস্টের শহীদ এবং আহতদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ এবং পূনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারও দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।