বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালিয়েছে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ যা বলতো, তাই আইনে পরিণত হতো। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর তুরাগের রানাভোলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য ফরম নবায়ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, একদিন কারাগারে দেখলাম বৃদ্ধ বয়সে কয়েদির পোশাক পরে ঝাড়ু দিচ্ছে বোরহান নামে এক বিএনপি কর্মী। তাকে দেখে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ যা বলতো, তাই আইনে পরিণত হতো। উত্তরায় আমার বাসায় ডিশের লাইনের সংযোগ দিত তুষার নামে এক ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তার ডিশের ব্যবসা কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে বিএনপির কর্মীরা এমন করলে আমরাও তো তাদের মতো হয়ে যাবো। তাদের মতো অন্যের ব্যবসা কেড়ে নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ দেশের রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা তারেক রহমান। লন্ডনে ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠকের কারণে জাতীয় নির্বাচন এপ্রিলের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। এ বৈঠকের কারণে একটি দল মনোক্ষুন্ন হয়েছে, তারা নারাজ। তারা জানে নির্বাচন হলে কোন দল সরকার গঠন করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। দেশের জন্য কাজ করি। আমাদের দল ক্ষমতায় এলে সর্বপ্রথম বেকার সমস্যার সমাধান করা হবে। এক কোটি বেকার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। তরুণ যুবকদের প্রাধান্য দিয়ে সরকার চালানো হবে। বর্তমানে যারা চাঁদাবাজি করছে তারা প্রফেশনাল চাঁদাবাজ। ওইসব চাঁদাবাজরা যেভাবেই হোক সরকারি দলে ভিড়তে চেষ্টা করে। বিএনপিতে কোনো চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না। ১৯৯১ সালে বিএনপি কয়টা সিট পাবে গ্যারান্টি ছিল না। তবে বিএনপির ভাবমূর্তি ভালো ছিল, তাই তখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দল আওয়ামী লীগের মতো ভোট কারচুপি করবে না এবং আইন ভঙ্গ করবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বিএনপি জনগণের অধিকার হরণ করে নয় বরং বিনয়ী হয়ে ভোট চাইবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় ভোটকেন্দ্রে কেউ যেতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই তার ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এটি চাই না। আমরা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিলাম, যাতে সবাই তার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর ঐকমত্য কমিশনে অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এত কিছুর পরও অনেকের মন ভালো নেই, যে কারণে গতকাল (মঙ্গলবার) তারা আসেইনি।
অনুষ্ঠানে নিজের বয়স এবং দলের তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ফখরুল বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে। যেকারণে বক্তব্য শুরু করতে আমার সময় লেগেছে। তার মানে আমাদের বয়স হওয়ায় কর্মক্ষমতা কমে গেছে। তাই আমাদের জায়গায় তরুণদের আসতে হবে, তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে হবে।
সদস্য নবায়ন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল সতর্ক করে বলেন, আজকে যে সদস্য নবায়ন করা হচ্ছে সেখানে যেন কোনো আওয়ামী লীগ না থাকে। কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারো স্বার্থ দেখতে পারে না। তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে।
তুরাগ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ খোকনের সভাপতিত্বে ও থানার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান।