ঝিনাইদহের ৪টি আসন

সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি। সেই সময়কে সামনে রেখে ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনে জমে উঠেছে মনোনয়ন যুদ্ধ। ইতোমধ্যেই বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।

তবে এ জেলায় বিএনপিতে যেমন রয়েছে একাধিক প্রার্থী ও দলীয় বিভেদ, তেমনি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিটি আসনে প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াত একসাথে আন্দোলন করলেও মনোনয়ন যুদ্ধে বিএনপির বিভক্তি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। জামায়াতের প্রার্থীরা এগিয়ে থাকতে পারেন।

ঝিনাইদহ জেলার চারটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে—

ঝিনাইদহ-১ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬ জন। ঝিনাইদহ-২ আসনে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ জন।

ঝিনাইদহ-৩ আসনে ৪ লাখ ৩ হাজার ২২৪ জন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫২০ জন।

ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা)

এই আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এখানকার একক প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আমির এএসএম মতিউর রহমানকে ঘোষণা করেছে। তিনি নিয়মিত জনসংযোগ করছেন এবং সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ-২ (সদর আংশিক-হরিণাকুন্ডু)

এ আসনকে বলা হয় জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হয়েছেন জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মো. আবুবকর। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কর্মসূচি ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের মতে, বিএনপি বিভক্ত থাকলে জামায়াতের প্রার্থী এগিয়ে যাবেন।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী— তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ ও সাবেক এমপি মসিউর রহমানের ছেলে ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু।

এছাড়া এ আসনে সক্রিয় রয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি গণসংযোগ ও পথসভায় মানুষের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট হলে রাশেদ খানকেও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা চলছে।

ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর)

এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় নির্বাচনে তাদের প্রভাবশালী অবস্থান রয়েছে। জামায়াত এখানকার একক প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমানকে আগেভাগেই মাঠে নামিয়েছে। ইসলামী বক্তা হিসেবে তার বাড়তি জনপ্রিয়তাও রয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, মরহুম সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদি হাসান রনি ও গায়ক মনির খান। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না হলে জামায়াত এ আসনে সহজেই জয়ী হতে পারে।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদরের আংশিক)

কালীগঞ্জ আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম এবং সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুর্শেদা জামান।

অন্যদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা নায়েবে আমির মাওলানা আবু তালেব। তিনি প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন এবং ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির বিভেদ থাকলে জামায়াত এখানে এগিয়ে যাবে।

কেন জামায়াত এগিয়ে?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঝিনাইদহে গত এক যুগে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে জামায়াত। এ জেলায় জামায়াত-শিবিরের প্রায় ১৬ থেকে ১৭ জন নেতা কর্মী শহীদ হয়েছেন। এজন্য তরুণ ভোটারসহ অনেকেই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

তরুণ ভোটাররা এবার প্রথমবারের মতো দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিতে আগ্রহী। অনেক প্রবীণ ভোটারও বলছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে তারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেননি। এবার তারা পরিবর্তন চান। ফলে জেলার ৪টি আসনের মধ্যে অন্তত ৩টিতে জামায়াতের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভোটাররা মনে করছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে। তারা সৎ, যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। পেশীশক্তি, ভয়ভীতি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিবাজদের ভোটের মাধ্যমে জবাব দিতে চান বলে জানান অনেকে।

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত ৫ দফা দাবি মানলেই আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা যেখানেই যাচ্ছি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিশেষ করে ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি জামায়াত-শিবির কর্মী শহীদ হয়েছেন। আশা করি আসন্ন নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন,এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে খোলামেলা ভাবে কোথায় ও কোন ভোটের কথা বলতে পারিনি। সুতরাং বর্তমানে আমরা ইউনিয়নভিত্তিক কমিটি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। অতীতের মতো এবারও বিজয়ী হব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে তরুণ, যুবক ও নারী ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তাদের অংশগ্রহণই নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সচেতন ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব করে তুলবেন।