ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আইনজীবীগণ বিচারের অংশ। বার ও বেঞ্চ মিলে বিচার কাজ সম্পন্ন নয়। বর্তমানে সমাজে ন্যায়বিচার নির্বাসনে চলে গেছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে তিনি আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান। অসহায় মানুষের জন্য বিনা ফিতে আইনী সহায়তা দেয়ার জন্যও তিনি আহ্বান জানান।

গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল-বিএলসি আয়োজিত ‘মাহে রমযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল’ এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। লইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং এডভোকেট মশিউল আলম। ঢাকা বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএলসি সহ সভাপতি এডভোকেট ড. মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন, এড. মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন মিঠু, জয়েন্ট সেক্রেটারি এড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, এড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এড. মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, কেন্দ্রীয় ট্রেজারার এড. খন্দকার রেজাউল করিম, বিএলসি ভাইস প্রেসিডেন্ট এড. আব্দুল বাতেন, এড. ড: গোলাম রহমান ভুইয়া, সাংগঠনিক সেক্রেটারি এড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক এড. আবু বাক্কার সিদ্দিক, নির্বাহী পরিষদ সদস্য এড. আব্দুল করিম, এড. মোহাম্মদ উজ্জ¦ল, এড. আজমত হোসাইন প্রমুখ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আদালত অঙ্গনে আমি বহুবার এসেছি; মুক্ত মানুষ হিসেবে নয়, বন্দী হিসেবে। আজ মুক্ত পরিবেশে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরে এবং আপনাদের দোয়া নেয়ার সুযোগ পেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, দুনিয়াতে বহু পেশা আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, সাংবাদিক কিন্তু কারো নামের আগে বিজ্ঞ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। শুধু আইনজীবীদের নামের পূর্বেই বিজ্ঞ শব্দ ব্যবহার করা হয়। বার ও বেঞ্চ নিয়েই বিচার কার্যক্রম। আইনজীবীগণ বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইজীবীদেরকে পলিটিক্যালি মোটিভেটেড না হয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। মানবজীবনের জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক রয়েছে। একটি আদালত আরেকটি চিকিৎসা। এ দুটো জায়গা ঠিক হয়ে গেলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে অর্থাৎ সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই দুটোই করুণ অবস্থায় রয়েছে। বলতে গেলে ন্যায়বিচার আজ নির্বাসনে। আর স্বাস্থ্যখাতে চলছে চরম অনিয়ম।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হলে দেশের নাগরিকগণ গর্বিত হতে পারত। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার কোনো নৈতিক মান নেই। যার কারণে আমরা বিশ্বের কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি না। বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো র‌্যাংক নেই বললেই চলে। আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ হতে শেখায়, মানুষকে সম্মান দিতে শেখায় সে শিক্ষা না থাকায় সমাজে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আমীরে জামায়াত বলেন, আমাদের দেশে বৃটিশ ল’কে মাদার ল’ বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত মাদার ল’ হচ্ছে কুরআনের আইন। ইসলামের আইনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো আইন তৈরি হয়নি। অনেক আইন আছে যা এসেছে কুরআন থেকে। যার কারণে বিদ্যমান অনেক আইন কুরআনের সাথে খুব বেশি সাংঘর্ষিক নয়। কুরআনের আইনের ভিত্তিতে এক মানবিক সমাজ গঠনে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।

তিনি বলেন, আইনজীবীগণ বিচারকার্যে বিচারকদের সহায়তা করে থাকেন। এমন এক দিন আসবে যেই দিনটিকে শেষ বিচারের দিন বলা হয়। সেইদিন কেউ কাউকে সহায়তা করতে পারবে না। সেই দিন বাদী, আসামী, আইনজীবী, সাক্ষী, বিচারক সকলকে এক কাতারে থাকতে হবে। সেইদিন বিচারকের আসনে থাকবেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। সেইদিন নেক কাজের ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। সেইদিন যে কামিয়াব হবে সেই হবে প্রকৃত সফল। সেইদিনের সফলতার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

আমীরে জামায়াত আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা চাইলে তার বান্দাদের জন্য রিজেকের ব্যবস্থা করেন। কাজেই আমাদেরকে আল্লাহর ওপরই ভরসা করতে হবে। রোজার শেষ প্রান্তে আমরা উপনীত হয়েছি। এই শেষ ১০ দিন হচ্ছে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন। আমাদের সবাইকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিগত ১৫ বছর আদালতে আইনের শাসন ছিল না। শেখ হাসিনার শাসন ছিল। উচ্চ আদালতে আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ৫দিন পর রিভিউর রায় প্রকাশ হলো। এ ধরনের অবিচার করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। আমাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। বিচারের নামে অবিচার করে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আটক রাখা হয়েছে। এসব অবিচারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এডভোকেট মোয়াযযম হোসেন হেলাল বলেন, মুহাম্মদ সা. এর শাসনামলে মানুষের মধ্যে তাক্বওয়ার গুণ অর্জন করেছিল। যার কারণে অপরাধীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছে। সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে তাক্বওয়া অর্জন করার জন্য তিনি আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আইনজীবীগণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে পারেন। মানুষকে আইনী সহায়তা দিয়ে, অসহায় মানুষের পাশে আইনী সহায়তা দিয়ে, বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।