মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে খুলনায় বিশাল জমায়েত ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। মহানগর ও জেলা বিএনপির এই যৌথ কর্মসূচিতে ছিলেন না খুলনা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি তার অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা ও দোয়া করেছেন। মতভেদ ও দূরত্ব ঘুচিয়ে এখনও সবাই এক মঞ্চে না এলেও অচিরেই এ সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদী শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর খুলনার ৬টি নির্বাচনী আসনে ধানের শীষ প্রতীকের দাবিদার সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে দলের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনা ছিল, যাকেই দলের মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। এরপর ৩ নভেম্বর দলের মহাসচিব এক প্রেস কনফারন্সে খুলনার ৫টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। শুধুমাত্র খুলনা-১ আসনে কাউকে ঘোষণা করা হয়নি। এ সময়ও দলের মহাসচিব সবাইকে এক হয়ে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, এই তালিকাই চূড়ান্ত নয়। প্রার্থীদের তৎপরতা ও কর্মকান্ড বিবেচনা করে পরবর্তীতে তালিকায় পরিবর্তন হতে পারে।
ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি খুলনায়। অন্য চারটি আসনে সমস্যা না থাকলেও খুলনা সদরের আসন নিয়ে প্রার্থীতার দাবিদার নেতাদের মধ্যে বরফ গলছে না। গুলশান কার্যালয়ের মিটিংয়ে এ আসন থেকে ডাক পেয়েছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন এবং মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মঞ্জু সুদীর্ঘ কাল খুলনা বিএনপির নেতৃত্ব দিলেও ২০২১ সালে মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার দাবি জানিয়ে প্রেস কনফারেন্স করলে তাকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। দলীয় পদ পদবীতে না থেকেও দীর্ঘ চার বছর বিএনপি ঘোষিত সকল কর্মসূচি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পালন করেছেন মঞ্জু।
এদিকে প্রার্থীতা ঘোষণার পর বিএনপির প্রথম কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বিপ্লব ও সংহতি দিবস। খুলনায় দিবসটি কিভাবে পালিত হবে? সব প্রার্থী কি এক মঞ্চে আসবেন? রাজপথের মিছিলে সবাই কি এক কাতারে দাঁড়াবে? এমন নানা প্রশ্ন ছিল তৃণমূলের কর্মী সহ সাধারণ মানুষের মনে। তবে শেষ পর্যন্ত পৃথকভাবেই পালিত হয়েছে কর্মসূচি।
খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জিয়া হলের প্রধান ফটকের সামনে নির্মিত মঞ্চে সমাবেশ করে। মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সমাবেশে আলী আসগার লবি, মনিরুজ্জামান মন্টু, শফিকুল আলম তুহিন, এডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ মিরাজ, মাসুদ পারভেজ বাবু বক্তৃতা করেন। বিএনপি ছাড়াও সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠন এবং খুলনার আশেপাশের সব উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
একই সময়ে শিববাড়ি মোড় থেকে সামান্য দূরত্বে সোনাডাঙ্গা থানাধীন তেতুলতলা মোড়ে পৃথক ভাবে দিবসটি উদযাপনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়া করেছে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা। মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শেখ মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বক্তব্য রাখেন জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আরিফুজ্জামান অপু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, মাহবুব কায়সার প্রমুখ।
জিয়া হল চত্বর থেকে বিএনপি সমাব্শে শেষে এক বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি তার পূর্বের রুট পরিবর্তন করে কেডিএ এভিনিউ ধরে ময়লাপোতা মোড় হয়ে রয়্যাল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিকেল ৫টায় এই মিছিল তেতুলতলা মোড় অতিবাহিত করার সময় সেখানে মঞ্জু অনুসারীদের সমাবেশ চলছিল। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়।
জানা গেছে, নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলীয় মনোনয়ন লাভের পর এখনও অপর দুই প্রার্থীর সাথে সাক্ষাৎ বা ফোনালাপ হয়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। অপরদিকে গুলশান অফিসে সাক্ষাৎ শেষে ফেরার পরেই চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে সবার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা খালিশপুরে এক কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল সাংবাদিকদের বলেন, খুলনা-২ ও খুলনা-৩ আসন থেকে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, সবাইকে নিয়ে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আমরা আজ কালকের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করবো ইনশাল্লাহ।