জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সংস্কারভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে তা আরও বড় সংকট সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার। তবে একটা যেনোতেনো নির্বাচন দিয়ে তো সমস্যার সমাধান হবে না। নির্বাচন তো ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালেও হয়েছে। কিন্তু তাতে সংকট কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। আমাদের দেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার অত্যন্ত জরুরি। তবে সুষ্ঠু ভোটের জন্য জুলাই সনদসহ সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভিআইপি লাউঞ্জে জামায়াতের এই নেতাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মাদ শাহজাহানসহ দলটির অনেক নেতাকর্মী।

ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বাস্তবায়নে দেরি করা হচ্ছে এইভাবে, সেইভাবে। ষড়যন্ত্র চললে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, তাহলে সবকিছুই প্রশ্নবোধক হয়ে যাবে। এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। তার আগে স্বল্প সময়ের মধ্যেই যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোকে আইনি ভিত্তি দিয়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘যারা এই সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন বা সরকারের পক্ষ থেকে যে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাতে যদি নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাদেরই জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সম্পর্কে জামায়াতের এই নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। এখানে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ছিল মূল। এটা সব দেশের প্রধানদের সম্মেলন। তবে বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র যেখানে সরকার প্রধানের সঙ্গে সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এটা এবার প্রতিফলিত হয়েছে যে, রাষ্ট্রের বড় বড় সমস্যায়, সমাধানে, বড় ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ। আমরাও সেটা তুলে ধরেছি। আমরা ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে অংশ নিয়েছি। সেখানে কথা বলেছি। ফরেন মিনিস্টার্স মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সেখানে আমি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। এনআরবি বা নন রেসিডেন্স বাংলাদেশের একটি প্রোগ্রামে প্রধান উপদেষ্টাসহ আমরা সফরসঙ্গী তিন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছি। আমেরিকাসহ আশপাশের দেশের বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের ব্যাপারে আমরা কী চিন্তা করি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের ব্যাপারে কথা হয়েছে। এই দাবিটা জামায়াতে ইসলামীই প্রথম করেছে, সরকারও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। আমি বলেছি, এখানে সহযোগিতা করার জন্য। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা ভোটার হবেন এবং ভোট দিতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছি। এরপর শিকাগোতে গিয়েছি। সেখানে আমার মেয়ে পড়াশোনা করে। তার সঙ্গে দেখা করেছি।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই একটি খবর ছড়ায় যে আপনি ভারত সফরে গেছেন। ভারতের সেনা প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অনেকেই বলছেন, আপনি চিকিৎসার জন্য গেছেনÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহের বলেন, এসব গুজব। আজকাল অনেক কিছু দেখতে হচ্ছে। এই গুজবের মধ্যেই একটা নাচ দেখলাম। সবার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নাচছেন প্রধান উপদেষ্টা। দেখলাম ভালোই নাচছেন। এখন এগুলো কী? গুজব? এগুলো এআই দিয়ে তৈরি ন্যক্কারজনক কাজ। মানুষ এ ধরনের বাজে জিনিস, চরিত্র হননের অপচেষ্টা এখন বোঝে।

তিনি বলেন, ‘নিউ ইয়র্কে অনেক উপদেষ্টা ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। আমরা সকলকে বলেছি যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া দরকার। তবে একটা যেনতেন নির্বাচন তো সমস্যার সমাধান দেবে না। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে, একটা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সব সমস্যার সমাধান।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। তার সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা প্রতিনিধি দলে ছিলেন।