প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই---মিয়া গোলাম পরওয়ার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন দেরিতে হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অবিলম্বে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ চাই।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের নিয়ে ইফতার করেন।
নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন যেটা চাইছি, অত্যন্ত আন্তরিকভাবে চাইছি যে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরা সবাই মিলে দায়িত্ব দিয়েছি তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে যেটা আমরা বার বার করে বলেছি, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে সমস্ত সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেই সংস্কারগুলো করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে যাবেন। কারণ আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে, যত দেরি হবে তত বেশি আবার বাংলাদেশে পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করবার জন্য বিরুদ্ধ শক্তি-ফ্যাসিস্ট শক্তিরা আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করে দেবে। তারা শুধু নয় একই সঙ্গে যারা জঙ্গি মনোভাব পোষণ করে থাকেন, যারা উগ্র মনোভাব পোষণ করে থাকেন, তারাও এই সুযোগগুলো নেয়ার চেষ্টা করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা ভয়াবহ দানবীয় পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজকে সেখানে আমাদেরকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আমরা পত্রিকার পাতা খুললেই বিচলিত হয়ে পড়ি যে আবার সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যে, হত্যা-খুন-জখম-ধর্ষণ এগুলো এমন একটা জায়গায় চলে যাচ্ছে বিধায় এগুলো আমাদেরকে উৎপীড়িত করছে।
অন্যদিকে আমরা দেখছি যে, ইয়াং জেনারেশন আমাদের ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আবার দেখছি যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, অর্গানাইজেশনগুলো আছে তাদের কর্মীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমে এসেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, পার্লামেন্টে এসে একদিকে তারা দেশ পরিচালনা করবেন অন্য দিকে অন্য যে বাকি যেসব প্রয়োজনীয় সংস্কার আছে, সেগুলো আমরা এক সাথে করতে পারব।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলতে চাই, উই আর কমিটেড টু রিফর্মস, সংস্কারের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ৩১ দফা দুই বছর আগে দিয়েছি যে সংস্কারের কথা কেউ বলেনি। সেই সংস্কারগুলো আজকে উঠে এসছে যার সাথে খুব একটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। সেজন্য আমরা মনে করি যে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব আসলে দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা হবে।
ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতা গণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সবাই একটি ক্ষেত্রে একমত যে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, অহেতুক দেরি না করে, যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অবিলম্বে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ চাই। সরকারকে বলবো, প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে যারা দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে হত্যা করেছে, দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, দেশে বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিচার দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা করছি আমরা। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে চলমান বিচার কাজের অগ্রগতি দেখতে চাই আমরা। তা না হলে সেই ফ্যাসিস্টরা আবারো ফিরে আসতে পারে।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দলই একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে। কিছু ছোট খাট বিষয়ে মতৈক্য থাকতেই পারে। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে সবাই একমত পোষণ করেছে। আসুন আমরা হাতে হাতে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। ফ্যাসিস্টরা যাতে আবার ফিরতে না পারে সেই ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকি। সমাজ থেকে চাঁদাবাজি, দখল, নৈরাজ্য দূর করে একটি মানবিক দেশ গড়ে তুলি।
মাহে রমযানের তাৎপর্য তুলে ধরে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পবিত্র মাহে রমযান আমাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি পাশবিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করে কিভাবে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গড়তে হয়, সেটি আমাদের শিক্ষা দেয়। এই রমযান আমাদের চারিত্রিক গুণাবলী সম্পন্ন মানবিক মানুষ হতে শিক্ষা দেয়। এর মাধ্যমে আমাদের মাঝে অন্যায়-অনাচার মুক্ত জাতি গঠনে শিক্ষা দেয়। তিনি বলেন, আমরা পবিত্র রমযানে যেভাবে ২৪ ঘন্টা মহান রবকে ভয় করে জীবন পরিচালিত করি, যদি বাকিটা সময়ে আমরা সেভাবে চলি তাহলে, দুনিয়া থেকে অন্যায় অবিচারসহ সকল পাপ দূরীভূত হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সেটি একটি ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে। তিনি রমযান থেকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা নিয়ে জন্মভূমি বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে সবাইকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ করতে পারেনি। এখন সময় এসেছে সত্য প্রকাশিত করার। আমরা সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে সাংবাদিকতা চাই না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সুযোগ চাই। তিনি বলেন, সুযোগ এসেছে, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সত্য ও ন্যায় সংবাদ তুলে ধরার। আমরা কারো দলদাসে পরিণত হতে চাই না। ফ্যাসিস্ট সাংবাদিকদের মতো পদলেহনকারী হতে চাই না।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আজম মীর শাহিদুল আহসান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, এলাহি নেওয়াজ খান সাজু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, সরদার ফরিদসহ বিএফইউজের দেশব্যাপী থাকা ১৯টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।