দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন। গতকাল শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। তারা বলেন, দলের কেউ অপরাধ করলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারি। এর থেকে বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায় তারা অন্য সংগঠনের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না তিনদলের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

পুরনা ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল আসামীদের অদ্যাবধি গ্রেফতার না করা এবং মামলা এজহার থেকে মূল তিন আসামীকে বাদ দেয়া ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে মুন্না বলেন, এই ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাদের দেখা গেছে আশ্চর্যজনক তাদেরকে মামলার প্রধান আসামী করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে তারা অদ্যাবধি গ্রেফতারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। মামলার এজহারে খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনীকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামী করেছে। ঘটনার ৬০ ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামীদের গ্রেফতার করা গেলো না, এটি একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।

মুন্না বলেন, আমরাও জানতে চাই, কারা কেনো এই তিন আসামীকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য জনকে আসামী করল। আর ঘটনাটি বুধবারের। গত শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেনো দুইদিন পর প্রচার হলো এর পেছনে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে দেখা উচিত।

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে বুধবার এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ড এবং তার পরের ঘটনাপ্রবাহের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। সেসব দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে মানুষ, তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এই ঘটনায় শুক্রবার পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। শুক্রবার রাতে যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের ৫জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।

মোনায়েম মুন্না বলেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।সভ্যতার এই যুগে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। মুন্না বলেন, গত কয়েক মাসে সারাদেশের যেকোন জায়গা থেকে যখনই আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত প্রায় এক বছরে আমরা আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। আমরা কোথাও দায় এড়ানোর রাজনীতি করিনি। বরং দায় গ্রহণ করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করেছি।

মুন্না বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আপনারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোন ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

মুন্না বলেন, গত প্রায় এক বছরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়নি। খুলনায় যুবদলের একজন বহিষ্কৃত নেতাকে গুলী করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। চাঁদপুরে খুতবা দেয়ার সময়ে একজন ইমামের ওপর নারকীয় কায়দায় প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। রগ কেটে হত্যা করা একটি বিশেষ সংগঠনের দীর্ঘদিনের হিংস্র রাজনীতির চর্চার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মুন্না অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি দেয়া শুরু করেছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে এবং এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণ চায় না তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।