হঠাৎ করে রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এমতাবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। প্রফেসর ইউনূসের পক্ষ থেকে এমন খবর ছড়িয়ে পরার পর নানা পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।

২০ মে মঙ্গলবার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এক বৈঠকে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ছাড়াও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর একদিন পর ২১ মে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা দাবি করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়ায় সারা দেশে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারি প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো একটি দলের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে সরকারি এ অবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। তাদের এ রায়ের (দক্ষিণ সিটির মেয়র নির্বাচন) বিরুদ্ধে আপিল করার কথা ছিল। কিন্তু তারা কোনো রহস্যজনক কারণে মামলার বিবাদি হওয়ার পরও আপিল না করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এ নির্বাচন কমিশনকে আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যাচ্ছে না। এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

একইদিন বুধবার মধ্যরাতে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সাংবাদিকদের ইশরাক বলেন, আমরা এখানে কোনো রায় বা মেয়র পদ দাবি করার জন্য আসিনি। বৃহস্পতিবার আদালতের রায় আমাদের পক্ষে যাবে কিনা সেটা মূল বিষয় নয়। শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি যে আমরা এই সরকারের অভ্যন্তরে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের ভূমিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে এসেছি এবং তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এটাই আমাদের প্রধান দাবি। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ও তার সমর্থকরা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। পর দিন বৃহস্পতিবার সকালেও কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইশরাক সমর্থকরা। এর ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কাকরাইল মোড় ছাড়েন ইশরাক সমর্থকরা। একইদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের 'বিতর্কিত উপদেষ্টাদের' সরানোর দাবি তোলে বিএনপি। এর আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভও করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। গত ১৪ই মে থেকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে তা দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গিয়ে ঠেকে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে 'বিএনপির মুখপাত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপি'র এক শীর্ষ নেতা। এই ডামাডোলের মাঝেই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে চাওয়ার ওই গুঞ্জন উঠে।

বৃহস্পতিবার দিনভর নানা ঘটনার পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর দাবি জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালকের বক্তব্য আবারও নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি আমরা ইতিপূর্বে অনেক বার উত্থাপন করেছি।

এদিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং পদত্যাগ দাবিতে নতুন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এর সাথে যোগ হয় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামানের এক বক্তৃতা। অফিসারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে সেনা প্রধান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তার অবস্থান আগের মতোই। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। ঢাকায় অবস্থানরত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। অনেক কর্মকর্তা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে নির্বাচন ছাড়াও করিডর, বন্দর, সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।

সেনা প্রধান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়েও কথা বলেন। এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। যা করার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই করতে হবে। যা-ই করা হোক না কেন, পলিটিক্যাল কনসেনসাসের (রাজনৈতিক ঐকমত্য) মাধ্যমে সেটা হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়েও কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সংস্কার প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, "দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারেরতো পদত্যাগের একটা খবর আমরা শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।

এদিকে, দেশের বর্তমান পরিস্থতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। জামায়াতের এক বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এই আহ্বান জানানো হয় বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল পক্ষকে মান, অভিমান ও ক্ষোভ একদিকে রেখে, জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই। যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি। আল্লাহ তা'য়ালা এই জাতিকে সাহায্য করুন এবং সকল ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন।

এরপর রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ পাঁচটি দলের জরুরি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে অপ্রত্যাশিতভাবে আসা বিভাজন মিটিয়ে ফেলতে হবে।

তার ভাষ্য, আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশী-বিদেশী দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পায়তারা করবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে নতুন করে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি বলেন, "বিএএল, নর্থ ও দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'নর্থ' বা 'উত্তর' বলতে সাধারণত: ক্যান্টনমেন্ট বোঝানো হয়। 'বিএএল' বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত রুপ। তিনি আরও লেখেন, আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রুপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।

একইদিনে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন "পূর্বের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে" দুঃখপ্রকাশ করছেন করেন। জনাব আলম লিখেছেন, "ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আর একদিনও সরকারে থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাওয়ার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেছেন জনাব আলম।

উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াতে বেশ কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করছেন ইশরাক হোসেন ও তার সমর্থকরা। জনাব আলম ফেসবুকে লিখেছেন, "পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী শ্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্টীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করেছেন মি. আলম।

"জুলাই অভ্যুত্থানের পর বৃহস্পতিবার রাত অন্যতম কঠিন রাত ছিল" বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

ইংরেজিতে লেখা ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, "গত রাত ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্যতম কঠিন রাত। একটি ভাবনা আমাকে সারা রাত জাগিয়ে রেখেছে।" এটা দোষারোপের নয়, আত্মসমালোচনার সময়- উল্লেখ করে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক অবিশ্বাস সমগ্র গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। আমরা স্বল্পমেয়াদী হিসাব-নিকাশের জন্য এমন এক জাতির আশাকে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে।" "এই বিপ্লব ছিল জনগণের। আর সেই জনগণের প্রতিই আমাদের দায়িত্বÑ সংযম দেখানো, সংলাপে এগিয়ে আসা এবং ঐক্য ধরে রাখা," লিখেছেন তিনি।

এদিকে, "দেশ কোনো ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যের পথে নেই" বলে ফেসবুকে এক পোস্টে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি লিখেছেন, "রাজনৈতিক এই ঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকেই।খোলসটা ছিল একরকমভাবে। বর্তমানে খোলসটাও খুলে পড়ছে, তাই অনেকে অবাক হচ্ছে।

অন্যদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আমাদের মিটিংয়ের পরে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। আসলে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনটা মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব। তিনটিই কঠিন দায়িত্ব। একটা হলো-সংস্কার, আরেকটা বিচার, আর বাকিটা হলো-নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য তো আমরা দায়িত্ব নিইনি। আরও দুটো দায়িত্ব আছে, সেগুলো আসলে আমরা পালন করতে পারছি কিনা। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যার যতরকম দাবি আছে, সব দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় বসে যাচ্ছেন। রাস্তা আটকে দিচ্ছেন, একদম ঢাকার শহর অচল হয়ে পড়ছে। সেই অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। এগুলো আলোচনা করে আমরা চিন্তা করলাম। আমাদের এই দায়িত্বটা কিন্তু জাতীয় দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, আমরা ক্ষমতা নিইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। এই দায়িত্বটা পালন করা তখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে, যখন আমরা সকলের সহযোগিতা পাবো। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। প্রত্যাশা অনেকের থাকতে পারে, আমাকে তো একটা এনাবেলিং এনভায়রনমেন্ট থাকতে হবে প্রত্যাশাটা পূরণ করার জন্য। আমরা চিন্তা করেছি, আসলে আমরা পারছি কিনা, এই যে প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে, বড় দাগে আমাদের তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য এই প্রতিবন্ধকতাগুলো আমরা কীভাবে মোকাবিলা করবো, আদৌ মোকাবিলা করতে পারবো কিনা, যদি মোকাবিলা করতে পারি কীভাবে মোকাবিলা করবো, যদি মোকাবিলা করতে না পারি তাহলে আমাদের কী করণীয় হবে, আমরা সকলে মিলে চিন্তা করছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যদি কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, উনি একটা সময় দিয়েছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও সুযোগ হওয়া উচিত ছিল না। কারণ বারবারই বলা হচ্ছে যে, একটা সময়সীমা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব তো আছেই, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।