বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সাথে ঢাকা সফররত চায়নার কমিউনিস্ট পার্টির সাউথ এশিয়া রিজিওনের ডিরেক্টর জেনারেল পেং জিউবিন এর নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিন-এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহেরের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন।
বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং-এ ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন,
“চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সাউথ এশিয়া রিজিওনের ডিরেক্টর জেনারেল পেং জিউবিন গত তিন দিন ধরে বাংলাদেশ সফর করছেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সরকারের প্রতিনিধি, আমাদের ইনটেলিকচুয়াল এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে তারা বৈঠক করেছে। আজকে তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডেলিগেটদের সাথে বৈঠক করলেন।
তিনি বলেন, তাদের সাথে আমাদের বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রসঙ্গত গত ডিসেম্বরে চায়না সরকারের দাওয়াতে আমাদের একটি ডেলিগেশন চায়না গিয়েছিলাম। এখালে উপস্থিত সকলেই সেই গেলিগেশনের সদস্য ছিলাম। ওটা কিছুটা সরকারি সফর ছিল। আজকের মিটিং পার্টি টু পার্টি। চায়না ইজ ইমার্জিং ফোর্স ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড; এ্যাজ ওয়েল এ্যাজ আমাদের রিজিওনে। এখানকার ইকোনমি, পলিটিক্স, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপে চায়নার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইনক্লুসিভ, ইসলামিক, লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি এবং আমাদের প্রিন্সিপল এবং পলিসি হচ্ছে জামায়াত সকলের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায় সরকারি ও বেসরকারি লেভেলে। সে হিসেবে আজকে আমরা আনন্দের সাথে চায়নার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের সাথে এখানে মিট করেছি, অনেক খোলামেলা আলোচনা করেছি এবং কতিপয় বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে যে ইন্ট্রাস্টেড আছে সেগুলো আমরা কথা বলেছি।
ডা. তাহের আরও বলেন, আমরা প্রথমেই আমাদের চিফ এডভাইজারকে তারা যে দাওয়াত দিয়েছে এবং কতিপয় চুক্তি করেছে, আশ্বাস দিয়েছে সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। চায়না এখন আমাদের প্রধান ইনভেস্টর এবং এটাকে আরও অনেক পরিসরে বৃদ্ধি করার জন্য রিকুয়েস্ট করেছি। কারণ বাংলাদেশে ইনভেস্টরদের প্রচুর সুবিধা আছে; ইটস এ্যান ইমার্জিং কান্ট্রি হিসেবে আমরা মনে করি। আমরা তিস্তা ব্যারেজের ব্যাপারে স্পেসিফিকলি বলেছি এবং সেকেন্ড পদ্মা ব্রিজ-এ ইনভেস্ট করার কথা বলেছি। ডিপ সিতে যে পোর্ট হচ্ছে এবং সেটার জন্য আমরা ইনভেস্ট করার কথা বলেছি। এতে যে ব্লু ইকোনমি রয়েছে; ইনভেস্ট করে তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। তাদের সাথে রিজিওনাল সিকিউরিটি ইস্যুজ-এর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এখানে এই রিজিওনে যাতে কেউ কারো প্রতি রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে এজন্য ব্যালান্স অব সিকিউরিটি ইস্যুজ এব্যাপারে আমরা তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যাপাকভাবে ছাত্রদেরকে স্কলাশিপ দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি। এ কয়েকটি বিষয়ে তারা আমাদের সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করেছে এবং তারা তাদের গভর্নমেন্টকে এসব ব্যাপারে অভিহিত করবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট করবেন। আপনারা জানেন চায়না কমিউনিস্ট পার্টি এবং গভর্নমেন্ট বলতে গেলে একই সত্তা। সুতরা আমরা আশা করি চায়নার সাথে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট, জামায়াতে ইসলামী টু গভর্নমেন্ট, পিপলস টু পিপলস, পার্টি টু পার্টির যে রিলেশন সেটা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাদের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স এ জামায়াতে ইসলামীকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরাও বলেছি অতি শীঘ্রই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমরা আমন্ত্রণ জানাব। সে কথা আমরা বলেছি; আমরা তাদের হোস্ট করব। মৌলিকভাবে এ কয়েকটি বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য আমি মনে করি ইটস এ্যান এ্যাপর্চুনিটি। কারণ এর আগেও আমাদের সাথে চায়না কমিউনিস্ট পার্টি বা গভর্নমেন্ট এর খুব বেশি ইন্টার্যাকশন ছিল না। কিন্তু এটা এখন ব্যাপকভাবে ইন্টার্যাকশন হচ্ছে এবং অনেক দ্রুততার সাথে রিলেশন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পার্টির পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছি সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে ১১ বা ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে; তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা বলেছি, ফুড, ক্লোথিং এবং শেল্টার এটা কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজ ভূমিতে রিক্রিয়েট করা। সেজন্য আমরা একটি প্রস্তাবও দিয়েছি। সেটা হচ্ছে আরাকান কেন্দ্রিক রোহিঙ্গাদের যে মেজরিটি আছে, সে এরিয়াতে একটি ইন্ডিপেনডেন্ট আরাকান স্টেট করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। চায়না এখানে সবচাইতে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মিয়ানমারের সাথে চায়নার বড় ধরনের রিলেশনশিপ আছে। তারা আমাদের এই নিউ প্রোপোজাল সম্পর্কে তাদের গভর্নমেন্টকে বলবে এবং উদ্যোগ গ্রহণ করার ব্যাপারে তারা চেষ্টা করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে তারা জানতে চেয়েছে নির্বাচন কখন হতে পারে কীভাবে হতে পারে। আমরা বলেছি যে, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তো একটা লাইন দিয়েছেন যে, ডিসেম্বরে হতে পারে; বেশি সংস্কার চাইলে জুনে হতে পারে। আমরা বলেছি আমরা এই প্রোপজালের সাথে আমরা একমত।
নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের স্পেসিফিক কোনো কিছু নেই। এবং তারা এটা বলেছে খুব পরিষ্কার করে যে আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। বাংলাদেশের বিষয়েও আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না। আমাদের কাজ হচ্ছে আপনাদের পলিসি এবং প্রোগ্রামকে সহযোগিতা করা। তারা কোনো ইন্টারফেয়ার করতে চায় না। এগুলো তারা ক্লিয়ারলি উচ্চারণ করেছেন। ”