যে লড়াই আমরা শুরু করেছি তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামবো না এমন প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেছেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল মুন্সীগঞ্জ শহরে এক পদযাত্রার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ নেতারা দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাতায়াতসহ নানা সংকট তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। পথসভাটি অনুষ্ঠিত হয় শহরের কৃষি ব্যাংক চত্বরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে।

এতে অংশ নেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ও সামান্তা শারমিনসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সকাল থেকেই কর্মসূচি ঘিরে শহরে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীকেও সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

পথসভায় বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, মুন্সীগঞ্জে ছিল এই উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আজ মুন্সীগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থা। ঢাকার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও যাতায়াত ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা আমরা জানি। শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের দুর্গতি রয়েছে মুন্সীগঞ্জে। মুন্সীগঞ্জ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। মুন্সীগঞ্জ সেই বিক্রমপুর, সেই ইদ্রাকপুরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাঁড়াতে চায়। তিনি আরও বলেন, আরেকটি লড়াই সামনে আসছে। আমরা সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা জানি, মুন্সীগঞ্জবাসী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সেই লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। গোপালগঞ্জে হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের আরও দশটা জায়গায় হামলা চালানো হবে। কিন্তু, আমাদের দমন করা যাবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা ঘোষণা করেছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছি, সেই লড়াই শেষ না করে আমরা থামবো না।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের হাজারো মানুষ প্রবাসে থাকেন। আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পক্ষে কথা বলছি। আপনাদের স্বজন প্রবাসীদের এ ব্যাপারে সরব হতে বলুন। আমরা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো। তিনি বলেন, আজ জুম্মাবার। আমরা আপনাদের সঙ্গে একত্রে নামায পড়বো। শহীদদের জন্য দোয়া করবো। বাংলাদেশের উপর আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করবো।

পথসভায় সারজিস আলম বলেন, জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, শাপলাচত্বরে গণহত্যার নির্দেশদাতা দিল্লিতে বসে থাকা হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই বাংলাদেশে হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেখে মরতে চাই। দেশের বাইরে বসে যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যার সশস্ত্র হামলার ষড়যন্ত্র করছে তাদের অচিরেই গ্রেফতার করে জুলাই সহযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দল-মতের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

এর আগে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জ শহর উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী নানাস্তরের মানুষ সভাস্থলে আসতে থাকেন। পথসভায় দলটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন। পথসভা শেষে দুপুরে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে তারা রওনা দেন।

আজ ও কাল চট্টগ্রাম অঞ্চলে এনসিপির পদযাত্রা

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আজ শনিবার থেকে চট্টগ্রাম বিভাগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হচ্ছে। কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম নগরজুড়ে দুই দিনের এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন এনসিপির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল হাসান আরিফ। তিনি জানান, শনিবার কক্সবাজারে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর সেদিন বিকেলে নেতাকর্মীরা বান্দরবানে যাবেন। সেখান থেকে রাতেই তারা চট্টগ্রামে ফিরে আসবেন এবং রোববার সকালে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা হবেন। রাঙামাটিতে দুপুরের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে বিকেল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধান পদযাত্রা শুরু হবে। চট্টগ্রাম নগরীতে পদযাত্রাটি কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে শুরু হয়ে বহদ্দারহাট, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট ও টাইগারপাস হয়ে দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে শেষ হবে। এখানে অনুষ্ঠিত হবে মূল সমাবেশ। তবে যানজট ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সূচিতে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জোবাইরুল হাসান বলেন, “গোপালগঞ্জে হামলার পরে চট্টগ্রামেও হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে এমন কিছু ঘটলে ছাত্র-জনতা রুখে দাঁড়াবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, গোপালগঞ্জের ঘটনার পর আওয়ামী লীগ আর নিরব নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার দায় আমরা মানছি, তবে এ ব্যর্থতা সরকারের দায় এড়ায় না। আমরা এখন নতুনভাবে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।’’‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এখনো সরকার কোনো ‘জুলাই সনদ’ দেয়নি। এনসিপি জনগণের দুয়ারে গিয়ে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনছে। এসব কথা সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।” গোপালগঞ্জে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাকে দায়ী করে জোবাইরুল বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, আমরা নিজেরাই ভাবছি আমাদের গণঅভ্যুত্থানের ফসল কীভাবে এমন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হলো।”সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ এবং যুব উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক টিপু সুলতান।