জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বলেছিলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে। এ দেশ যে সিস্টেমে চলে এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ মাফিয়া সিস্টেমের সঙ্গে আমরা আর খেলব না। এ পুরোনো খেলার বিরুদ্ধেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, আমরা রক্ত দিয়েছি। ফলে খেলার নিয়ম বদলাইতে হবে । “কিন্তু আমরা জানি, খেলার নিয়ম এখনও বদলায় নাই

শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকালে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ শহরে পদযাত্রা শেষে চাষাঢ়া গোল চত্বরে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাইয়ে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। এই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গতরাতে জুলাই পদযাত্রা তোরণ আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে এসে পদযাত্রার জনস্রোতকে বন্ধ করতে আতঙ্ক তৈরি করছে।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরও নারায়ণগঞ্জে কতগুলো মার্ডার হয়েছে। কেন নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা এখনো ঠিক হচ্ছে না; আমরা সরকারের কাছে সেই জবাব চাই। আওয়ামী লীগের সেই মাফিয়া, দখল, গডফাদারতন্ত্র পুনর্বাসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ব্যবসাগুলো পুনর্বাসিত হচ্ছে। আমাদের জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের বাসায় গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যেসব শহীদ পরিবার মামলা করেছে সেই পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের যে অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছিল আমরা তা ভেঙে ফেলব।

এনসিপির নারী নেত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কি কোনো হুমকিতে ভয় পাই? আমাদের বোনেরা কি ভয় পায়? আমরা কখনো ভয় পেয়েছি? আমরা ভয় পাই না, পাব না।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতা কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, সাভারে ঢাকার প্রবেশ পথে আওয়ামী সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্টদের ঢাকায় ঢুকতে দেয়নি জনতা। নারায়ণগঞ্জবাসী বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলেই ঢাকাবাসী রাজপথে নেমে এসেছিল।

নারায়ণগঞ্জের সেই ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। আমরা সব শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তাদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করি।

পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “সন্ত্রাসী হামলা করে আমাদেরকে থামিয়ে রাখা যাবে না। আওয়ামী লীগকে ফেরানোর জন্য ভারতীয় শক্তিগুলো একযোগে মাঠে নেমেছে। কিন্তু আমরা আবারও রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আর কখনো ফিরে আসতে দেব না। কেয়ামত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতির আর কোনো সুযোগ নাই।”

আওয়ামী লীগের আমলে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল অংশগ্রহণ করায় তাদের ‘গাদ্দার’ বলেও মন্তব্য করেন আখতার।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় কিছু বুদ্ধিজীবী ‘খুনিদের পক্ষ’ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমাদের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে আসে। সুতরাং আপনাদের মতো সুশীলতা আমি দেখাতে পারি না। আপনাদের বুদ্ধিজীবীতা কোম্পানির কাছে, প্রশাসনের কাছে বর্গা দেওয়া। আমাদের জীবন জনগণের কাছে বর্গা।”

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ‘উৎখাত হওয়া’ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

পদযাত্রায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু উপস্থিত ছিলেন।