অতীতে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ভারতের তাঁবেদারি করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৮৫ সালে ভারতে কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে এরশাদ সরকার এদেশের ধর্মপ্রাণ শান্তি প্রিয় সাধারণ ছাত্র - জনতার উপর গণহত্যা চালিয়েছে। শুধুমাত্র ভারতকে খুশি করতে সেদিন জনগণকে রাজপথে নামতে দেওয়া হয়নি। আলেম-উলামাদের প্রশাসন ডেকে নিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে পুলিশ - বিডিআর গুলি চালিয়ে ০৮জনকে হত্যা করে। শত-শত মানুষকে আহত করে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
১১ মে কুরআন দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলিমের বাংলাদেশে যারা কুরআনের অবমাননার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছে তাদের স্মরণে দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
রোববার (১১ মে) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের আয়োজনে ঐতিহাসিক কুরআন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ১১ মে কুরআন দিবস পালন বন্ধ করতে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ ঐদিনই জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। স্বৈরাচার এরশাদ, স্বৈরাচার হাসিনা পরস্পর একে-অপরের দোসর। তারা ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঘৃণ্য বর্বরোচিত কাজে নিয়োজিত ছিল। তারা ইসলাম ও কুরআনের চরম দুশমন। যেই কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী অকাতরে জীবন দিয়েছে সেই কুরআন সমাজ বাংলা জমিনে গড়তে হবেই, হবে। কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে সমাজে অর্থনেতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আসবে। বৈষম্য দূর হবে। সমাজ থেকে অন্যায়, অনাচার, ব্যভিচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ মুক্ত হবে। আলোকিত সমাজ গড়ে উঠবে। পক্ষান্তরে সমাজে মানুষের তৈরি মতবাদে অশান্তি, অনাচার, ব্যভিচার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ বিস্তার লাভ করছে। এসব অপকর্ম থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নাই। তাই কুরআনের সমাজ বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, পবিত্র কুরআনের অবমাননার প্রতিবাদে ১৯৮৫ সালের ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসলাম প্রিয় মানুষ রাজপথে নেমে আসলে তৎকালীন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসন এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৮ জনকে শহীদ করে। অসংখ্য মানুষকে আহত করে। সেই থেকে ১১ মে কুরআন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা হারিয়ে পরবর্তীতে আমৃত্যু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। কুরআনের আলো নিভাতে যারাই চেয়েছে যুগে যুগে তারাই দেশান্তরী হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ আলেম-উলামাদের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। যুব সমাজের হাতে মাদক তুলে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব শূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বিপরীতে ইসলামি ছাত্র শিবির তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক ও আদর্শ শিক্ষা দিয়ে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছে। কুরআনের প্রতিটি আয়াত কেয়ামত পর্যন্ত ডায়নামিক। কুরআন ধর্মীয় উসকানি দেয় না, শান্তির বার্তা ও শিক্ষা দেয়। কুরআন সাধারণ ধর্ম গ্রন্থ নয়, কুরআন বিজ্ঞানময় মহাগ্রন্থ। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৪ বছর স্বাধীনতা- স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসলামি ছাত্র শিবিরের যত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে আর কোন দলের এতো নেতাকর্মী জীবন দেয়নি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিতে একমাত্র বাঁধা জামায়াত-শিবির। এজন্য জামায়াত-শিবিরকে জঙ্গি, মৌলবাদ, স্বাধীনতা বিরোধী নানান অপবাদ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে যত অপপ্রচারই করা হোক জনগণ জানে, জামায়াত-শিবির দুর্নীতি করে না, সন্ত্রাসী করে না, চাঁদাবাজি করে না, বিদেশে টাকা পাচার করে না এবং করবে না। কুরআনের বিপক্ষে কোন কাজ কাউকে বাংলার জমিনে করতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুশিয়ার করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখা ইসলামি ছাত্র শিবির সভাপতি মো. আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য রাজশাহী জোনের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম, ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর আমীর মাওলানা ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আবু যার গিফারী, নায়েবে আমীর লতিফুর রহমান ও অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল আলীম, পৌর আমীর হাফেজ গোলাম রাব্বানী সহ ইসলামি ছাত্র শিবিরের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
এদিকে দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের আয়োজনে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস উপলক্ষে শহরের শহীদ ঈদগাহ মায়দানে আলোচনা সভা ও ছাত্রদের মাঝে কুরআন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইসলামি ছাত্র শিবির ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শাখার উদ্যোগে দারিদ্র্য বিমোচনের বিনামূল্যে দুটি অটো রিকশা বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও মানুষের নেতা মো. নূরুল ইসলাম রোববার (১১ মে) দুপুরে শহরের রেহাইচর ব্রীজ সংলগ্ন বটতলায় অটোরিকশা দুটি সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুস সবুর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা আবু যার গিফারী, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল আলীম, পৌর আমীর হাফেজ গোলাম রাব্বানী সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।