বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। আর আমরা সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। একটি দেশ বলেছে তারা জামায়াতে ইসলামী বাদে বাকি সব দল নিয়ে কাজ করবে। আমরা বলছি, আল্লাহ যদি আমাদের সরকারে বসায়, তাহলে তাদেরসহ সবাইকে নিয়েই আমরা দেশ গড়বো। দেশের চিত্র পাল্টে দিবো। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ উপহার দেবো। সরকার গঠনের পর কেউ যদি আমাদের ওপর আগের মতো অবিচার চালানোর চেষ্টা করে- তাহলে আমরাও বসে থাকবো না। দোয়া করুন, সতর্ক থাকুন, বাংলাদেশ যেনো আর কোন ফ্যাসিবাদের মুখে না পড়ে। তিনি বলেন, একদল লুটপাট করবে, বিদেশের মাটিতে বেগমপাড়া করবে, মানুষ অত্যাচারের শিকার হবে। এটা আমরা চাই না। এজন্য জনগণের কথা এবার আমরা পরিবর্তন চাই। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউ থামাতে পারবে না। আর সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ আর ব্যাংক লুটপাট করবে না, মানুষ খুন করবে না, মানুষের জিনিসপত্র আত্মসাৎ করবে না। আমরা শিক্ষার উন্নয়ন করতে চাই, মানুষের কল্যাণ করতে চাই, দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই। সমাজ নষ্ট করা ইঁদুরদের আমরা তাড়াতে চাই। আপনারা আপনাদের হাত আমাদের জন্য বাড়িয়ে দিন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীর আমান উল্লাহ কনভেশন হলে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও সিলেট-৬ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।
সমাবেশে সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের জনশক্তি ছাড়াও বন্ধুপ্রতিম ও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত বলেন, যতদিন জামায়াতকে দেশের কল্যাণে দেখবেন, দেশ গড়তে দেখবেন, তখন আপনাদের হাত বাড়িয়ে দিবেন। সবাই মিলেই বাংলাদেশ। আগামীতে আমাদের একজনও যদি এমপি নির্বাচিত হন, তাদের কেউ সরকারি প্লট নিবে না ও বিনা টেক্সের গাড়িতে চলবে না। জনগণের ওপর ট্যাক্স বসানোর জন্য আমাদের ভোট দিবে না। জনগণের পাহারাদারী করার জন্য আমাদের ভোট দিবে। নাহলে আমাদের ভোট দিবেন না। আমরা ভালো বললে ভালো বলবেন আর খারাপ করলে আমাদের ধরবেন, ছাড় দেবেন না। অবশ্যই আমাদের ভুল ধরিয়ে দিবেন।
তিনি আরও বলেন, দেশে এমন একটা সময় ছিল, মানুষ মুখ খুলে কথা বলতে পারতো না, কর্মস্থলে যেতে পারতো না, জীবনের কোনো গ্যারান্টি ছিল না। অদৃশ্য মানুষগুলো কখনো ফিরে আসবে কি না, তার নিশ্চয়তা ছিল না। কখন কোন মায়ের বুক খালি হবে, কোন বোন বিধবা হয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা ছিল না। তারা শেষ পর্যন্ত আমাদের নিষিদ্ধ করে। অন্য কোনো পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিছু দলের ওপর হামলা-মামলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো বুলডোজার দিয়ে কারো বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়নি। আমরা এখনো আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তারা নেই। এটাই আল্লাহর ফায়সালা।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সেই রাতে যদি আমরা বলতাম- যার যা ক্ষতি হয়েছে, যে করেছে, তার সাথে মোলাকাত করে এসো। তাহলে সেদিনই দেশ বধ্যভূমিতে পরিণত হতো। কিন্তু সেই কঠিন সময়ে আমরা বললাম প্লিজ কেউ কারো ক্ষতি করবেন না। আওয়ামী লীগ দায়িত্বজ্ঞানহীন দল হলেও এ জাতি এ দেশকে রক্ষা করেছে। তারা সরকারবিহীন একটি দেশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয় নি। তখন দেড় মাসে ২৩ জন খুন হয়েছে। এটা অনেকেরই রাজনৈতিক কারণে। আমরা তরুণদের বলেছিলাম ২৪ ঘণ্টা মসজিদ, মন্দির, মট পাহারা দিতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ সারাদেশে আমাদের কর্মীরা তা করেছিল। শুধু আমরা একা এই ভালো কাজ করি নি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই ভালো কাজ করেছে। তাদেরকে মুবারকবাদ।
জামায়াত আমীর বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাদের পুলিশ স্টেশন ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি আপনারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা বলছেন তারা আতঙ্কে আছে। আমরা বাংলাদেশের ৩২২ টা থানায় পাহারা দিয়েছি। তাদেরকেই পাহারা দিয়েছি, যারা আমাদের বড় ক্ষতি করেছে। আমাদের ওপর তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে, মেরেছে, তবুও তাদের আমরা পাহারা দিয়েছি। নির্বাচনের আগে জনসভাকে এবাদত মনে করে আর পরে সেটাকে খাজনা নেওয়ার সভায় পরিণত করে। পরে বলে আপনি কিছু করলে আমাকে খাজনা দিয়ে ব্যবসা করেন। কোনো একটা জায়গায় মানুষ শান্তিতে নাই। এমনকি মসজিদের ইমাম নিয়েও এখন সন্দিহান। দেশের শতকরা ৬২ ভাগ মানুষ চরম দরিদ্রসীমায় রয়েছে। এর ২২ ভাগ ছাত্র আর বাকিরা শ্রমিক।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বচ্ছ সাংবাদিকতা, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা দেশকে এগিয়ে নিবে। আমরা সাদাকে সাদা বলবো, কালোকে কালো বলবো।
প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রবাসে ১৪ দিন কাটিয়ে এসেছি, প্রবাসীদের সাথে কথা বলেছি। আপনাদের ভোটের অধিকার ছিল না, আমরা লড়াই করেছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রবাসীদের একটি অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে বাকি অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হবে। সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। প্রবাসীরা তাদের আগ্রহের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সকলকে ভোটের আওতায় নিয়ে আসা হোক। এখন যতটুকু পারা যায়, ততটুকু অন্তত করা হোক। আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশগড়ার কাজে আমরা প্রবাসীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ।