জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে জুলাইযোদ্ধা ও সাংবাদিক অবদানকে স্বীকার করছি। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিকদেরকে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৬২/৬৩ জন যে সাংবাদিকরা আহত হয়েছে তাদের সুস্থতার জন্য দোয়া করছি। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে যেমন জাতীয় ঐক্য জরুরি, তেমনি ভাবে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা জরুরি। জুলাই গণহত্যার বিষয়গুলো দেখে দেখে আমাদের উচিত আত্মসমালোচনা করা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনকালে প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অসংখ্য সাংবাদিক ভাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কারাগারে বন্দী ছিলেন। এতো চ্যালেঞ্জ-এর মধ্যে সাংবাদিকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছেন তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এতো জুলুম নির্যাতনের পরও যদি বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হয় তবে আবার ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে জুলাই ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকদের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক।
অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা প্রদান করেন বিএনপি মহাসচিব। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যে সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা হলো সভ্যতার ব্যারোমিটার। আপনারা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে এবং দিবেন। রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম তিনটি নিয়ে সমন্বয় করে রাষ্ট্রকে এগিয়ে যেতে হয়। দেশের প্রশ্নের আমাদের ঐক্য জরুরি যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে, ৪ কোটি তরুণ এবার নতুন করে ভোট দিবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো মৃত্যু ভয়হীন চেতনা নিয়ে নব্য ফ্যাসিবাদকে রুখে দিব আমরা ইনশাল্লাহ।
রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের নামে এখনও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে দেশে নির্যাতন, গুম, খুন, লুটপাট এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের যে চর্চা চলেছে, তা এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে স্পেস দেওয়ার জন্য নতুন নতুন তত্ত্ব আসছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার জন্য নানান ফিলোসোফির মাধ্যমে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দরজা ওপেন করার চক্রান্ত চলছে। এটা হচ্ছে এ দেশের মানুষকে ব্যবহার করে, কোনও রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করে। তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসের ঘটনাগুলো আমাদের মাঝে মাঝে স্মরণ করা উচিত। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের নামে এখনও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন বিদায় নিয়েছে, হাসিনা চলে গেছে। এখানে আত্মতৃপ্তি, স্বস্তির কিছু নেই। শেখ হাসিনা পালালেও ফ্যাসিজম পালায়নি। ব্যক্তি হাসিনা চলে গেলেও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, বিচার বিভাগে, পুলিশে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। ফলে একজন ফ্যাসিস্ট গেলেও দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়নি। ফ্যাসিবাদের আদর্শ যারা লালন করে তারা কিন্তু এখনও দেশে আছে। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের পথে তারা সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন তো বিদায় নিয়েছে... নো। আমরা তো তাঁকিয়ে দেখতে পাই, আমাদের সামনে কিন্তু এখনো দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিরাজমান। দেশের প্রতিটি সেক্টরে তারা এখনো লুকিয়ে আছে। মানুষের ওপর সেই চাপ রয়ে গেছে। এক মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দরকার।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমি বলছি না, আমাদের কোনো ভুল নেই, আমরা নিখুঁত তা না। আমাদের সবার মধ্যেই ভুল-ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ না থাকলেই যদি আমরা ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ি, তাহলে এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে আবার ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং লুটপাট পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। নামমাত্র ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটলেও জনগণের ওপর ফ্যাসিজমের ছায়া এখনো রয়ে গেছে। রাষ্ট্র যন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতারা, দিল্লীর আধিপাত্যের কালো থাবা চুতর্দিকে গেড়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কুটনীতি, ইভেন সামনের নির্বাচনের জনগণের আকাক্সক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া যায় তার চক্রান্ত কিন্তু এখনো বিদ্যমান।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন আসলে পরাশক্তির যে খেলা হয় সেই খেলা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। অর্থপাচার, লুটপাট, দুর্নীতির সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে বিভেদ, প্রতিহিংসা ও অস্থিরতা পরিহার করে জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে। প্রতিহিংসা রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। আমাদের চেতনা অটুট রাখতে হবে, ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পিছিয়ে। তাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই।
তিনি বলেন, সংস্কারকে কেন্দ্র করে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবে, এর মানে এই না সেই দল নির্বাচন চায় না, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়। যখন আলোচনার কোনও বিষয় আসবে তখন বিতর্ক হতে পারে, নতুন যুক্তি আসতে পারে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে ) সভাপতি মো: শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেলারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আব্দুল হাই সিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালেরকণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, বিএফইউজের সহ-সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) প্রধান প্রতিবেদক দিদারুল আলম দিদার, ডিইউজে’র সহসভাপতি রাশেদুল হক, ডিইউজে’র কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।