বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুম ও খুনের জন্য শেখ হাসিনার বিচার বাংলার মাটিতে হতেই হবে। তিনি বলেন, গুম ও খুনের জন্য শেখ হাসিনা সরাসরি দায়ী। এজন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মায়ের ডাকের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুমের ঘটনা নিয়ে মানববন্ধন ও চিত্র প্রদর্শনীর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে খুঁজে বের করে আনার চেষ্টা করবে বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার করা হবে। আর এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই, যতদিন পর্যন্ত আমরা তাদের শাস্তি দিতে না পারব, ততদিন আমরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে আছি। তিনি বলেন, বিএনপির ১৭শ’ নেতাকর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেল। এক পরিবারের সাতজন পর্যন্তও গুম হলো। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়, কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম। আমি খুব পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গুম কমিশনকে পাবলিকলি নিয়ে আসা ও শুনানি করায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা এই ইস্যুগুলোতে তাদের আত্মীয়দের, মায়েদের, ভাইদের কান্না বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটার জন্য তাদেরকে (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যারা নেতৃত্ব দিয়েছি তাদের মধ্যে এমন একজনও বাকি নেই, যার বিরুদ্ধে একশ’ থেকে চারশ’ পর্যন্ত মামলা হয়নি এবং সেই মামলাতে গ্রেফতার হইনি। তাই এটা ভাবা ভুল হবে যে, বিএনপি এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচন অবশ্যই চায়, এই নির্বাচন চায় এই বিচার (গুমের ঘটনার) নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য। আমাদের কাছে গুম বা ডিজ-এপিয়ারেন্স বিষয়টা বই বা খবরের কাগজের একটা তথ্য ছিল। এই অনুষ্ঠানে একজন বলল যে, ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে এটা হয়। আমাদের দেশে এটা (গুম) আগে ছিলো না। এই প্রথম ভয়াবহ দানব হাসিনা সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এই গুম এদেশে নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, আমাদের প্রায় বিশ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত তার কোন সদুত্তর পাইনি।
হাসিনার বিচার করতেই হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই প্রত্যাশা করব যে, আমাদের এই শিশুগুলো যারা পিতা হারিয়েছে, বোনেরা যারা ভাই হারিয়েছে, মায়েরা যারা সন্তান হারিয়েছে তাদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য এই সরকার চেষ্টা করবে বের করে নিয়ে আসার। সে যেই হোক না কেন, যারাই হোক না কেন, যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, এর চেয়ে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ আর কিছু হতে পারে না। আমরা সবাই জানি, যে ইনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে একটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সেই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আজকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডগুলো ও গুমের জন্য দায়ী, হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে। এই দেশের মাটিতে হতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা কেউ নিরাশ হবেন না। জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না, আজ পর্যন্ত হয়নি। এর প্রমাণ আপনারাই, আপনারাই আন্দোলন করে সেটাকে সফল করেছেন। বিশেষ করে আমার তরুণেরা, যুবকেরা, এই শিশুরা দেখবে তাদের পিতা, তাদের ভাইয়ের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে সেটার বিচার তারা দেখে যেতে পারবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের গুম ঘটনার তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব।
মায়ের ডাক এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।