শাহীন সৈকত, রাজবাড়ী : পদ্মার পাড় ঘেঁষা রাজধানী ঢাকার খুব নিকটে কিন্তু অবহেলিত এক জনপদের নাম রাজবাড়ী। পাংশার উজান থেকে দৌলতদিয়ার ভাটি পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কি.মি. জুড়ে পদ্মা বয়ে গেছে এ জেলার পাস দিয়ে, তাই নদী ভাঙ্গন এ জেলার একটা অংশের মানুষের প্রতি বছরের কান্নার কারণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া মাদক ও সন্ত্রাস এখানে অনেক বড় সমস্যা। এ জেলায় জাতীয় সংসদের ২টি আসন। আসন ২টিতে মোট ভোটার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ। পুরুষ ভোটার প্রায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার নারী ভোটার ৪ লাখ ৬৪ হাজার।

রাজবাড়ী-১

রাজবাড়ী সদর এবং গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন, এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ১০ হাজার ৭৭৭ এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৯০৪ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৮৭৩ জন।

ইতিমধ্যে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে, নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করার মতো। সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকার হাট-বাজার, গ্রাম-মহল্লা। এছাড়া অন্য দলের প্রার্থীরা এখনো নিরব। এ আসনে ৯১ সালে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয় এবং তার মৃত্যুর পর ৯৩ সালের উপনির্বাচনে তাদের প্রার্থী বিজয় হলেও ২০০১ এর নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী বিজয় হয়। আগামী নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে তবে বিএনপিতে এই মুহূর্তে তিন জনের নাম শোনা যাচ্ছে যারা নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন, অন্যদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী।

জামায়াত প্রার্থীর প্রচারণা তুঙ্গে

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী রাজবাড়ী-১ আসনের জন্য অনেক আগেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য এবং জেলা জামায়াতের আমীর, রাজবাড়ী বারের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডঃ মোঃ নুরুল ইসলাম ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। আদর্শিকভাবে জামায়াতে দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং বা বিভক্তি না থাকায় তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। জামায়াতের সাংগঠনিক ঐক্য এবং শৃঙ্খলাই তার জয়ের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জামায়াতের বাইরের রাজনীতি সচেতন জনগণ মনে করছেন। তার নিজের পৈত্রিক বাড়ি গোয়ালন্দ পৌরসভায়। এই উপজেলা এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটের দৌড়ে তিনি এগিয়ে আছেন বলেই অনেকেই মনে করছেন। একটি পৌরসভা এবং চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা গঠিত। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের উপজেলার একমাত্র প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান। অনেকেই মনে করেন গোয়ালন্দ উপজেলার ভোটাররাই এবারের নির্বাচনে নির্ণয়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভোট ভাগাভাগি হলেও গোয়ালন্দের ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সমীকরণ জামায়াত যদি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে জামায়াত প্রার্থী এ্যাডঃ মোঃ নুরুল ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। জামায়াত তার সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে সবদিক থেকে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে। তিনি নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রাম-মহল্লায় প্রায় প্রতিদিন গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জামায়াতের কর্মীরাও প্রতিদিনের প্রচারণায় নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। জামায়াতের দলীয় প্রার্থী ৯১ সালের নির্বাচনে এবং ৯৩ সালের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত মুখ এবং বিভিন্ন সমাজ ও জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত। তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন আমাকে সুযোগ দিলে, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে, আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, রাজবাড়ীতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, জেলা সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ণের ব্যবস্থা, চিকিৎসার মান উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্প কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ্যাডঃ মোঃ নুরুল ইসলাম আরও বলেন আমার নির্বাচনী এলাকার একটা বড় অংশ পদ্মা বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছরই নদী ভাঙনের মুখোমুখি হয়, এটা পদ্মা পাড়ের জনগণের জন্য অনেক বড় একটা সমস্যা এই সমস্যায় প্রতি বছর অনেক পরিবারকে কষ্ট পেতে হয়, নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান।

বিএনপি’র তিন প্রার্থী

নির্বাচনী মাঠে এই মুহূর্তে বিএনপির তিনজন প্রার্থীর নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম অন্যতম। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। তার আগে তিনি রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচিত হবেন বলে মনে করেন। এছাড়া অন্য যে দুজনের কথা শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনী মাঠে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. আসলাম মিয়া। তিনি ১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তা আবার প্রত্যাহার করে নেন। দুইজন প্রচারণায় এগিয়ে আছেন। অন্যজন জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম মিয়া সীমিত পরিসরে নির্বাচনী কাজ করছেন বলে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে মনে হয়েছে। অন্য কোন দলের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় তাদের কোন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।