অনেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস। গতকাল শনিবার বিকালে দলের এক কর্মশালায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাকে অনেকে বলে, ভাই নির্বাচন কি হবে.. নির্বাচন কি হবে? আমি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বলি, আমি আশাবাদী নির্বাচন হবে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি ভাবি, অনেকে নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা তো বার বার বলেছি, নির্বাচন হলে আমাদের মাঠে থাকতে হবে, আমরা মাঠে থাকবো। জনগণ যদি আমাদেরকে ভোট দেয় আমরা সরকারে যাবো। জনগণ যদি আমাদের ভোট না দেয় যাকে দেবে তাকে আমরা মেনে নেবো। আমাদের কথা পরিষ্কার, আমরা জোর করে রাতের আঁধারে নির্বাচন করে ভোট নিতে চাই না। আমরা আর দিনের বেলা মানুষের ভোটের অধিকার হরণ আমরা দেখতে চাই না। আমি সরকারকে অনুরোধ জানাব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেন।

রাজধানীর বাসাবোর মাদারটেক আব্দুল আজিজ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সবুজবাগ থানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থাপিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

সংস্কার সংস্কার বলে মুখে ফেনা তোলা হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে এই সরকার সংস্কার সংস্কার করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেললো। কিন্তু সংস্কার কি হলো এটা কিন্ত আমি এখনো দেখি নাই, আমার নজরে আসে নাই কি সংস্কার হইছে, আপনাদের নজরে আসছে কিনা জানি না।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে যারা সংস্কারের জন্য নেমেছেন মাঠে সংস্কারের কাজ করছেন সবাই যার যার অবস্থানে, স্ব স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিমান আমি তাদের সবাইকে সম্মান করি। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে এটাও বলতে চাই, আপনাদের সঙ্গে তো এদেশের মাটি ও মানুষের কোনো সম্পর্ক নাই ছিলো না। আপনি হঠাৎ করে এসে কি করে বুঝবেন.. এদেশের মানুষ কি চায়? কি করে বুঝবেন এদেশের মানুষের মনে কথা? কি করে বুঝবেন ১৭ বছর আমরা যেন রাস্তায় আন্দোলন করেছি, ১৭ বছর আমাদের নেতাকর্মীরা যে কষ্ট সহ্য করেছে এটা কিভাবে অনুভব করবেন? আমাদের মনে ব্যথা ও কষ্ট আপনারা কখনোই বুঝতে পারবেন না। তাই সংস্কার সংস্কার করে সময় নষ্ট করবেন না। যথা সম্ভব শিগগিরই নির্বাচনটা দেন।

নির্বাচন শুনলে অনেকের মাথা খারাপ হয়ে যায় উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের অনেক ভাই আছেন, ঢাকায় আছেন যারা ইউটিবে অনেক কথা বলেন। মাঝে মাঝে আমার নজরে পড়ে, তাদের মনে হয় নির্বাচনের কথা শুনলে মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও আছে নির্বাচনের কথা শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ ওরা কখনো নির্বাচন করবেও না, করেও নাই।

নির্বাচন নিয়ে অনেকেরই ভয় আছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, হ্যাঁ ভয় আছে, কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভয় আছে, নতুন রাজনৈতিক দলের ভয় আছে। অনেক পুরনো রাজনৈতিক দলের ভয় আছে, তারা নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে পারবে না।

বিশেষ বিশেষ গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। খেয়াল করে দেখবেন পত্র-পত্রিকায় ইদানিং ভালো কিছু লেখতে চায় না। লেখে না বিশেষ বিশেষ কিছু পত্রিকা। আবার বিশেষ বিশেষ কিছু পত্রিকা আছে তারা বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অনেক ভালো লেখে। অর্থাৎ বিএনপি এদেশের মাটি ও মানুষের দল, বিএনপি দেশনেত্রীর হাতে পালিত একটি দল, বিএনপি জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত একটি দল এই দলকে অনেকের মানতে কষ্ট হয়।

তিনি বলেন, কালকে দেখলাম, বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধেয় আলেম, আজকে তাকে আলেম বলব, তবে শ্রদ্ধেয় বলব না। কারণ তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্বন্ধে উদ্ভট কথা বলেছেন ফেসবুকে। উনার বলেছেন, বিএনপির সময়ে অনেক ভবন করে দেশের অনেক চাঁদাবাজি লুটপাট করা হয়েছে। আমি অবাক হয়ে যাই একজন আলেম লোক, উনি বরাবর আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। ফেসবুকে যেটা(পোস্ট দিয়েছে) আছে সেখানেও তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছেন। আমি উনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, ওই সময়ে যারা বিএনপি সম্পর্কে লম্বা লম্বা বাজে বাজে কথা বলছেন, আপনি যার সুর তুলে যে কথা বলেছেন, ওই সময়ে আপনারা কনসার্টে টেডওয়ে বাজনার তালে তালে সবাই মিলে বিএনপিকে কুলষিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি বলেন, তার ফলশ্রুতিতে এক এগারো হয়েছিলো আওয়ামী লীগ বলেছিলো আমরাই এনেছি এক এগারো। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, বিএনপি সম্পর্কে যে সমস্ত কথা-বার্তা বলা হয়েছিলো, লেখা হয়েছিলো তা যে একশ ভাগ মিথ্যা ছিলো এটা বাংলাদেশের কোট থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সকল অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, তারেক রহম্না সকল অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সকল কার্যক্রম স্বীকৃতি পেয়েছে। সেইদিন স্বাধীনতার পদক ফেরত দেয়া হয়েছে। কেনো? বিএনপি ছিলো নির্দোষ, বিএনপি ছিলো নিষ্কুলুষ, বিএনপিকে কালিমা লিপ্ত করা হয়েছিলো সকলে মিলে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে এটা করা হয়েছিলো।

তিনি বলেন, মাওলানা ফয়জুল করীম মুখে বিদ্বেষমূলক কথা বলেছেন। অর্থাৎ বিএনপিকে তারা দেখতে চায় না। পত্র-পত্রিকায় আলেম নাম নিয়ে মানুষ সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না। আপনারা তো নিজেরাই বলেন, গীবত ছড়ানো পাপ, রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা পাপ। তাহলে কেনো এই কথাটা বললেন?

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।