আর মাত্র তিন দিন পরেই দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাসও নিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর তাকে স্বাগত জানাতে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছে বিএনপি। অভ্যর্থনায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পরিদর্শন করেছেন বিমানবন্দর থেকে আগমন পথের সড়ক। ওইদিন দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এরপর তাকে রাজধানীর তিনশ ফিটে সংবর্ধনা দেবে বিএনপি। কিভাবে তাকে বরণ করে নেয়া হবে সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে পরামর্শ নিচ্ছেন মিডিয়াসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের সিনিয়র মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজনও করেছে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি। মূলত, তারেক রহমানের আগমনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এতো আয়োজন। বিএনপির ধারণা, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ২৫ ডিসেম্বর অর্ধকোটি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করবেন।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার তারেক রহমানের ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। ওইদিনই তাকে ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা গত শুক্রবার বলেন, সব কিছু পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে। তিনি (তারেক রহমান) ট্রাভেল পাসও পেয়ে গেছেন। যদিও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানও তার িেরফাইড ফেসবুক পেইজে ট্রাভেল পাসের বিষয়টি নিশ্চিৎ করেছেন।

তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপি একটি কমিটিও গঠন করেছে। গত কয়েকদিন ধরে তারা নির্ঘুম দিন পার করছেন। এরই অংশ হিসেবে একটি প্রতিনিধিদল শুক্রবার বিমানবন্দর থেকে আগমন পথের সড়ক ও অভ্যর্থনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিনসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত সব বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সরকার এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি তিনশ ফিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে। তারেক রহমান জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন, জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবেন। এটি কোনো জনসভা নয়।

জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাজধানীর কোন স্পটে কারা অবস্থান করবে ইতোমধ্যে তা প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের রাজধানীর চার প্রবেশদ্বারে অবস্থান করার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী রাজধানীর আশপাশের এলাকার কেন্দ্রীয় এবং জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক নেতা বলেন, পূর্বাঞ্চলের নেতাকর্মীরা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেতাকর্মীরা কদমতলী-বাবুবাজার ব্রিজ, উত্তরাঞ্চলের নেতারা আমিনবাজার এবং মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের নেতাকর্মীরা উত্তরা-টঙ্গী এলাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। বিএনপির ধারণা, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ২৫ ডিসেম্বর অর্ধকোটি মানুষ রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করবেন।

সূত্র জানায়, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে ২৫ ডিসেম্বর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তিনি দেশে পা রাখার পর বিমানবন্দর থেকে এই নিরাপত্তা আয়োজনের সূচনা হবে। দেশে ফেরার পর তিনি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমনাগমনের সময় পাবেন পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তারেক রহমানের বাসভবন এবং অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারেকাছেও ভিড়তে দেবে না পুলিশ।

এদিকে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে বিশেষ ট্রেন ও বগি রিজার্ভ-এর ব্যবস্থা করেছে বিএনপি। দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেল কর্তপক্ষ বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে দিবে। এতে করে সারাদেশ থেকে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেনে করেও নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে পারবেন। তারেক রহমানের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির লক্ষাধিক নেতাকর্মী ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা বরিশাল নৌ-রুটে চলাচলকারী ১৫টি লঞ্চ ও সড়ক পথে শতাধিক গাড়িতে যাবেন নেতাকর্মীরা। বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক তারেক রহমান বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে আগামী ২৪ ডিসেম্বর রাতে নগরীর লঞ্চঘাট থেকে ৫টি লঞ্চ ও ২৫ তারিখ সকালে নথুল্লাবাদ থেকে ২০টি বাস নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। ২৫ তারিখ বরিশাল মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় প্রোগ্রাম শেষ করে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এছাড়া বরিশাল জেলা বিএনপির নেতারা জানান, ১০ উপজেলা থেকে ১০টি লঞ্চ ও সদর উপজেলার নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে ঢাকায় যাবে।

জানা গেছে, ট্রেন-লঞ্চের পাশাপাশি দেশের প্রত্যেকটি জেলা উপজেলা থেকে বাস, মিনি বাসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেতাকর্মীরা তারেক রহমানতে বরণ করে নিতে ঢাকায় আসবেন। এসব নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল মাঠসহ খোলা জায়গায় বিশেষ ব্যবস্থায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার জানান, তারেক রহমান তার মেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন। লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছাবেন। আমরা তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।

অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরাটা হবে ঐতিহাসিক। তার দেশে ফেরা স্মরণীয় করে রাখতে কাজ করছে কমিটি। এতে কোনো রকমের ঘাটতি হবে না।

এদিকে স্বামী তারেক রহমানকে নিয়ে দেশে ফিরতে শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে আসা সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমান গতকাল শনিবার লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর স্বামী তারেক রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের সঙ্গে আবার দেশে ফিরবেন ডা. জোবাইদা রহমান।

ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনে তাকে স্মরণীয় সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত বিএনপি। তিনি বলেন, তার আগমনকে ঘিরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদেরকে আমরা সংগঠিতভাবে বরণ করে নেব। এটি হবে ইতিহাসের একটি স্মরণীয় সংবর্ধনা। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের’ জামিন ও তাদের চলাফেরার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র শহীদ জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যেটি লালন করেছেন, সেই গণতন্ত্র সঙ্গে করেই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তার আগমন মানেই গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। দেশের জনগণ আজ তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।