বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় মিথ্যা ও সাজানো মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে ছিলেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন।
এটিএম আজহারুল ইসলামের পুরো নাম আবু তোরাব মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম। বাবার নাম ডাঃ নাজির হোসেন আহমেদ। তিনি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বাতাসিওন গ্রামে ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাসে এম এ পাস করেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবনে বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে রাজনীতির শীর্ষ অবস্থানে নিজেকে উপস্থাপন করেন। তিনি সব সময় ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিবেদিত থাকতেন। তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন এই সভাপতির বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় দক্ষতা রয়েছে। এটিএম আজহার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তিনি দৈনিক সংগ্রামের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি একাধারে মারুফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, রংপুরের আল-আমিন ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান, তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্টের সদস্য, বদরগঞ্জ উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান, বদরগঞ্জ ইসলামী পাঠাগার ও সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উইকোপিডিয়া থেকে আরও জানা যায়, এটিএম আজহার ১৯৯৬ সালের জুন মাসে রংপুর-২ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ৮ হাজার ২৭৩ ভোট পান, যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির বিজয়ী প্রার্থী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ৬৬ হাজার ৯২৯ ভোট পান।
এরপর এটিএম আজহার ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে রংপুর-২ আসনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন। তিনি ১৭ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি রংপুর-২ আসন (বদরগঞ্জ এবং তারাগঞ্জ) থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ৩৬ হাজার ৫৮৬ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। বিজয়ী প্রার্থী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম ম-ল পান ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ ভোট।
উল্লেখ্য, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে রংপুরে সংঘটিত গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে তাকে মৃত্যুদ- ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই তিনি রিভিউ আবেদন করেন, যেখানে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তার আপিল শুনানির অনুমতি দেন। এরপর নিয়মিত আপিলের শুনানি শেষে গতকাল রায় দেন আদালত, যেখানে তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।