ফ্যাসিবাদী আমলে মানবতার বিরুদ্ধে গুমের মতো হিংস্র গুরুতর অপরাধের ন্যায়বিচার হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি একথা বলেন। গুম দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

তারেক রহমান বলেন, জোরপূর্বক গুম একটি বৈশ্বিক সমস্যা, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিশেষ করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এ ধরণের অমানবিক ঘটনা ঘটে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন বা ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ ধরণের নির্দয় কৌশল ব্যবহার করে থাকে। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে নজিরবিহীন গুমের ঘটনায় দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

নির্ভরযোগ্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুম করেছে। এটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। আজ পর্যন্ত একটি গুমের ঘটনারও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি। তবে আশার কথা যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে যাতে আর কোন দিন গুমের ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’- এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।

তারেক রহমান বলেন, এই হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো ছিলেন তাদের পরিবারের প্রাণপ্রিয় সদস্য। তাদের স্বপ্ন, ভালোবাসা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অদৃশ্য মানুষগুলো কোথায় আছে আমরা জানিনা, তবে রেখে গিয়েছে এক মর্মান্তিক ও বেদনাবিধুর বাংলাদেশ, যেখানে আমাদের অর্জিত মানবাধিকার ও মূল্যবোধ লুণ্ঠিত হয়েছে। গুম আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। আইসিসি এর রোম সনদের ৭ (২) অনুচ্ছেদে গুমকে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, আর মানবাধিকারের এই লঙ্ঘনের জন্য ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। গুমের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবার তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে পারে না এবং বিচার পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়। আমি এই মনুষ্যত্বহীন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য দুনিয়াজুড়ে ঐক্য ও সংহতির আহবান জানাই।

তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে আর কোনো ব্যক্তি যেন গুম না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য, আমরা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত গুম প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেশন (আইসিপিপিইডি) অনুসারে যথাযথ আইন প্রণয়ন করবো ইনশাল্লাহ।