রাজনীতি
ডিআরইউ’র ইফতার মাহফিলে ডা. শফিকুর রহমান
সাংবাদিক আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে সমাজ দ্রুত এগিয়ে যায়
সাংবাদিক আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে সমাজ দৌড়ে এগিয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মূলত সোসাইটির দুই ধরনের স্টেকহোল্ডার থাকে এবং দেখেন।
Printed Edition

সাংবাদিক আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে সমাজ দৌড়ে এগিয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, মূলত সোসাইটির দুই ধরনের স্টেকহোল্ডার থাকে এবং দেখেন। এর মধ্যে স্পষ্টতই সাংবাদিকরা দেখেন আর রাজনীতিবিদরা দেখেন। এই দুইটা জায়গায় যদি স্বচ্ছতা আর ভাল বোঝাপড়া থাকে, একটা সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এই দুই জায়গার যেকোন এক জায়গায় স্বচ্ছতার ঘাটতি হলে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সামনের দিকে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে যায়। দৌড়ে তার গন্তব্যের দিকে যেতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থা মাঝখান দিয়ে সেটাই হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির ইফতার মাহফিলে দেওয়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে জামায়াতের আমীর এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই প্রথমবারের মতো গেলেন জামায়াতের আমীর। ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা একটা ইনটিগ্রিটেড বা কমপ্লেক্স সোসাইটির মানুষ। আমরা ছোট একটা দেশ আর বিপুর সংখ্যক জনসংখ্যা। এই নিয়ে আমরা চলছি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর। কেউ যদি বলে যে এই দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি তাহলে আমি তার সাথে একমত হবো না। তবে আমি স্পষ্ট গলায় বলতে চাই, উন্নয়নের সম্ভাবনা যতটুকু ছিল, অতীতে যারা দেশ পরিচালনা করেছে, তারা এই সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগাতে পারেনি। দেশকে বদলানোর পরিবর্তে অনেকে নিজেকে বদলিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজনীতির স্লোগানটা যদি সত্যি এমন হয়ে থাকে, আমার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, তাহলে তো দেশেরটাই বড় করে দেখার কথা ছিল। তবে বাস্তবে রাজনীতিবিদরা তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তম্ভ। ফোর ডি মানে ফোর ডাইমেনশনাল বিষয়। সামনে থেকে পেছন থেকে দুই পাশ থেকে। মূলত সোসাইটির দুই ধরনের স্টেকহোল্ডাররা এটা দেখেন। এর মধ্যে স্পষ্টতই সাংবাদিকরা দেখেন আর রাজনীতিবিদরা দেখেন। এই দুইটা জায়গায় যদি স্বচ্ছতা আর ভাল বোঝাপড়া থাকে, একটা সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এই দুই জায়গার যেকোন এক জায়গায় স্বচ্ছতার ঘাটতি হলে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সামনের দিকে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে যায়। দৌড়ে তার গন্তব্যের দিকে যেতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থা মাঝখান দিয়ে সেটাই হয়েছে। এঅবস্থায় রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। একই সাথে সাংবাদিকদেরও বুক টান করে দাঁড়ানো দরকার বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর।
বিচারপতি মরহুম সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের উদাহরণ টেনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তিনি একটা ইতিহাস রচনা করে গেছেন। তিনি স্বৈরাচার আইয়ুব খানের কথা এবং ইন্সট্রাকশন শোনেন নাই। এজন্য ইতিহাসে একজনই মাহবুব মোর্শেদ খ্যাতি পেয়েছেন। তার রাস্তা ধরে যদি বাকী বিচারপতিরা চলতেন, তাহলে বিচারাঙ্গন নিয়ে আজ কথা তোলার সাহস কেউ পেতো না। কিন্তু সেটা পারেনি তারা।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছেন। এই দেশে এবং এই সমাজেই তার উদাহরণ রয়েছে। আমরা উৎসাহিত করি, বিশেষ করে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগত জানাই এবং বলি আপনারা আমাদের সমালোচনা করেন। আমাদের প্রশংসা করবেন কি-না সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু সমালোচনা করতে ভুলে যাবেন না। আপনার সমালোচনাটা আপনার ভাষায় করুন, যেভাবে পছন্দ করেন। আপনার কৌশলে আপনি করুন। আপনার গণমাধ্যমে যেভাবে মনে করেন। তবে সব কিছুর আগে যেন আমরা আমাদের দেশের স্বার্থটা বিবেচনা করি। তাহলে সেই সমালোচনা আমাদের সংশোধন এবং পরিমার্জনে অবশ্যই সহযোগিতা করবে। আমরা সেটিই চাই। এখানে আমরা সাদা গলাই বলি, আপনারা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলুন। আপনারা পবিত্র মন নিয়ে এই অঙ্গনে এসেছেন মেহেরবানি করে অন্য দলের সমালোচনা করবেন কি করবেন না আমাদেরটা করুন।
জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। আমাদের যদি ভুল হয় তাহলে আপনাদের কাছে ধরা পড়বে। নিউজকে অবিকল রেখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিপোর্টারদের বলেন, ভিউটা আপনার মতো করে বলেন। যারা আপনারটা পছন্দ করবে সে কবুল করবে। আর যে পছন্দ করবে না কবুল করবে না। কিন্তু নিউজের ক্ষেত্রে যদি পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়ে যায়, তাহলে নিউজের সেন্স পরিবর্তন হয়ে গিয়ে যিনি কথাটা বলেছেন, তার ওপর সুবিচার করা হয় না। এরকমের অবিচারের শিকার আমিও হয়েছি। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় এটাতে সামাজিক অস্থিরতা না হউক সেজন্য আমরা হজম করে চলি। তবে এটাও ঠিক যে, আমরা সাহসের সাথে বলবো আপনারা শুধু আমাদের মন্দ দিক তুলে ধরবেন না, ভাল দিকগুলোও তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি মানবিক সমাজ দেখতে চাই। সেই ৪৭, ৫২, ৭১, ২৪ এবং তার মাঝে আরও অনেক ছোট অনেকগুলো বাংলাদেশকে দেখতে হয়েছে। এই সমস্ত জায়গায় যারা জাতির ও দেশের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য মহান রবের কাছে ফরিয়াদ জানান ডা. শফিকুর রহমান। তিনি মাগুরার আছিয়ার আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংবাদিকের প্রতি প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, আছিয়াকে নিয়ে আপনারা অনেক লিখেন, দেশে কি আর কোন আছিয়া নাই? মুনিয়া হত্যা হয়নি, তনু হত্যা হয়নি? তাদের নিয়ে লিখেন না কেন? লিখতে পারবেন না, কারণ আপনাদের সাংবাদিকরা এমন জায়গাতে বসে আছে যে লিখতে পারবেন না। আমরা কেন লিখি না যে অমুক দলের সাথে অমুক রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক আছে! কখনো ১৫ কোটি আবার কখনো ১শ’ কোটি টাকার কথা শুনিনি আমরা ? তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকদের দায় দায়িত্ব অনেক। নিজেদের ছোট সাংবাদিক ভাববেন না। সাংবাদিক ছোট হলেও আপনার কলমের কালি অনেক দামি।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক কমিউনিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। আমীরে জামায়াত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।