বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোরর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের গোড়াপত্তন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৩৬ শে জুলাই দুই সহস্রাধিক শহীদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে এ জাতি ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমরা শহীদদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। পঙ্গুত্ববরণকারীদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সাথে সরকারের কাছে প্রতিটি জুলাই যোদ্ধার পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি গতকাল সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এমপ্লয়ীজ লীগের উদ্যোগে সিআরবি চত্বরে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিআরআইএলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মজুমদার-এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিআরইএলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্যপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য, বিআরইএলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি জনাব মোঃ সেলিম পাটওয়ারী. সহ-সভাপতি জনাব আবদুল আজিজ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এ বি এম এহতেশাম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক প্রমুখ।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে এ দেশের মানুষের মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য লগি বৈঠার তাণ্ডব করা হয়েছিল। যার শুরু হয়েছিল গাজীপুর শ্রমিক কল্যাণের জেলা সভাপতি রহুল আমিনের শাহাদাতের মাধ্যমে। অতঃপর তারা অসাংবিধানিক ১/১১ সরকারকে ডেকে এনে দুই বছরের জন্য ক্ষমতায় বসায়। এই সরকার ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর জুলাই আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘণ্টা বেজে উঠেছিল। আবু সাঈদের দেখানো পথে চট্টগ্রামের শহীদ ফারুক, ওয়াসিম আকরাম, শান্ত এবং ঢাকায় সুজন মিয়া ও শাহজাহান আলী শাহাদাতের মুক্তিকামী মানুষের বিজয় শুরু হয়েছিল। শেখ হাসিরা বলেছিল, শেখের বেটি পালায় না, কিন্তু ঠিকই পালিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদকে অবিলম্বে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। জুলাই সনদকে যদি আইনি মর্যাদা দেওয়া না হয় তাহলে আগামী সরকার জুলাই যোদ্ধাদের অপরাধী সাব্যস্ত করবে। তাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাবে। আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলতে চাই, আপনাকে তারা অপরাধী সাব্যস্ত করবে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব এই সনদকে আইনি ভিত্তি দিন। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংসদ নির্বাচন ও গণ ভোট একই দিনে দেননি। বিএনপি শহিদ জিয়ার আদর্শ থেকে সরে গেছে। বিএনপিকে শহিদ জিয়ার আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি দেশ ও জনতার মুক্তি চাইলে শহিদ জিয়ার পথে ফেরত আসতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে করতে হবে। নির্বাাচন পেছানোর কোনো ষঢ়যন্ত্র আমরা মেনে নিবো না। একই সাথে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রেলওয়েসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি মুক্ত করা। উন্নয়নের ধারা পুনরায় প্রবাহিত করা। বর্তমানে রেলের হিসাবে বলা হচ্ছে ১ টাকায় আয় করতে আড়াই টাকা খরচ করতে হয়। সে হিসাবে এটি লোকসান জনক প্রতিষ্ঠান। লোকসান হওয়ার পেছনে প্রধান ও একমাত্র কারণ হল দুর্নীতি ও লুটপাট। কেনাকাটা হতে শুরু করে নিয়োগ, নিম্নমানের পণ্য আমদানি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির উৎসব চলছে। ফ্যাসিবাদ এই দুর্নীতিকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে শহিদ মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের মত নেতৃত্ব লাগবে। এই ধরনের নেতৃত্বছাড়া একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান করার জন্য রেলের সেবাকে সম্প্রসারণ করতে হবে। রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগকে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যেভাবে কাজ করতে হবে। ঠিক একইভাবে রেলের সেবাকে কীভাবে বৃদ্ধি করলে এই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে সে ব্যাপারে কাজ করতে হবে। রেলের যাত্রা ব্রিটিশ আমলে শুরু হয়েছে। তখন থেকে প্রতিটি আন্দোলনে রেলের শ্রমিকরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। বিআরআইএল শ্রমিকদের জন্য একটি নিয়ামত। অন্য শ্রমিক সংগঠন যখন টেন্ডারবাজি ও লুটপাটে ব্যস্ত।