বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজীবন সংগ্রামী, কিংবদন্তিতুল্য নেতা মরহুম তরিকুল ইসলাম ছিলেন মা, মাটি ও মানুষের রাজনীতির প্রকৃত অনুসারী। তিনি সারাজীবন যশোরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। কখনো অন্যায় ও অনিয়মের সঙ্গে আপোষ করেননি, বরং আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তিনি ছিলেন নিঃস্বার্থ জননেতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরে বিএনপির আয়োজিত মরহুম তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, তরিকুল ইসলাম ছিলেন এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। তাঁর মতো নেতার জন্ম যুগে যুগে একবারই হয়। যশোরের উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন। শত নির্যাতন ও নিপীড়নের মাঝেও তিনি আদর্শচ্যুত হননি। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ ও কর্ম আজও প্রাসঙ্গিক।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি আজকের এই স্বৈরামুক্ত বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেননি, অথচ আজ তাঁর মতো নেতারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ৭ নভেম্বর জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা এক হয়ে জাতিকে মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছিলেন। ২৪ জুলাই ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যেমন ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আজও আমরা সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আছি, বলেন তিনি। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা জনগণের আস্থা হারিয়েছে। ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের আচরণ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অসম্মানজনক ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে উপদেষ্টাদের হাতে পুতুলে পরিণত করা হয়েছে এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিএনপি রাজপথে ভেসে আসা কোনো দল নয়; এটি জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দল। তাই আমাদের অবমূল্যায়ন করলে তা হবে মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না অন্তর্র্বতী সরকার ব্যর্থ হোক, কিন্তু যদি নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করা হয়, তবে পরিণাম ভালো হবে না। দ্রুত একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনের মাধ্যমে সরকারকে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। পরিশেষে বিএনপি মহাসচিব মরহুম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং যশোরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরিচয় তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রবণ, সাবিরা সুলতানা মুন্নি, আবুল হোসেন আজাদ, অমলেন্দু দাস অপু, জাহানারা সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, আলী আহম্মদ, মনোয়ার হোসেন, হাসান জহির, তানিয়া রহমান, জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল মান্নান ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান আকরাম প্রমুখ।স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নার্গিস বেগম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর জেলার সব উপজেলা ও থানা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।