শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক নন বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই বিপ্লবী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুজিববাদ একটি জীবন্ত বিপদ। এটাকে পরাজিত করার জন্য রাজনৈতিক, আদর্শিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের দাবি রয়েছে। শুক্রবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ইংরেজিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন নাহিদ।
এনসিপি নেতা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ জনগণের, শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক নন। আমরা স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা এবং ত্যাগ স্বীকার করি, কিন্তু আমরা তার শাসনের অধীনে প্রকাশিত জাতীয় ট্র্যাজেডিকেও স্মরণ করি। তার নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের একটি উপনিবেশ রাজ্যে পরিণত হয়, ১৯৭২ সালে জনবিরোধী সংবিধান আরোপিত হয় এবং ভিত্তি স্থাপন করা হয় লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা এবং একদলীয় বাকশাল একনায়কতন্ত্রের।’
নাহিদ লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির অন্তরালে মুজিব পূজা ও মুক্তিযুদ্ধ পূজা, একটি রাজনৈতিক মূর্তি পূজা জনগণের উপর অত্যাচার, জাতিকে লুট করে, নাগরিককে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিভক্ত করে। এটা গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে আধুনিক জমিদারি ছাড়া কম কিছু ছিল না। তবুও মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল মানুষের সংগ্রাম। কয়েক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তার পৈতৃক সম্পত্তি, জবাবদিহিতাবিহীন শাসন এবং মুজিব নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি ও দমন-কলাপকে ন্যায্যতা দিয়েছে।’
২০২৪ সালে জনগণের বিদ্রোহ এই জমিদারিকে ধ্বংস করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি, কোনো পরিবার, কোনো মতাদর্শ আর কখনো নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে বা বাংলাদেশের উপর ফ্যাসিবাদ আরোপ করতে পারবে না। জাতির পিতা শিরোনাম ইতিহাস নয়, বৈষম্যকে চুপ করে রাষ্ট্রকে একচেটিয়া করার আওয়ামী লীগ তৈরির একটি ফ্যাসিস্ট হাতিয়ার। বাংলাদেশ সব নাগরিক সমান, আর কোনো একক ব্যক্তিই তার জন্ম বা ভবিষ্যতের মালিকানা দাবি করতে পারে না। শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামে মুজিববাদ একটি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, ফ্যাসিস্ট আদর্শের বিরুদ্ধে।’
নাহিদ লিখেছেন, ‘মুজিববাদ ফ্যাসিবাদ ও বিভাজনের একটি আদর্শ। এর মানে হলো জোরপূর্বক গুম, হত্যা, ধর্ষণ এবং নিয়মিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করা। এর মানে হচ্ছে ইসলামোফোবিয়া, সাম্প্রদায়িকতা, এবং সংখ্যালঘু ভূমি দখল। এর মানে হলো বিদেশি শক্তির কাছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিক্রি করা। ১৬ বছর মুজিবকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল অস্ত্র হিসেবে, আর মূর্তির আড়ালে ছড়িয়েছিল অপহরণ, হত্যা, লুট, গণহত্যা। মুজিববাদ একটি জীবন্ত বিপদ উল্লেখ করে নাহিদ আরও লেখেন, ‘এটাকে পরাজিত করার জন্য রাজনৈতিক, আদর্শিক, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের দাবি রয়েছে। আমাদের সংগ্রাম সম নাগরিকদের একটি প্রজাতন্ত্র, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার, যেখানে কোনো দল, কোনো বংশ, কোনো নেতা জনগণের উপরে দাঁড়ায় না। বাংলাদেশ কারও সম্পত্তি নয়, এটা গণপ্রজাতন্ত্র।’