আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন এবং সাবেক আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তির পর যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে, তখনই আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি কথিত কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এই কল রেকর্ডে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মরণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ এবং আইজিপি মামুনের স্বীকারোক্তি প্রসঙ্গে তার চাঞ্চল্যকর মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের এই কল রেকর্ডটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সাক্ষাৎকারের শুরুতে ফজলুল বারী বিবিসি প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল দাবি করেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মরণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার যে কল রেকর্ডের সত্যতা বিবিসি পেয়েছে, তা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) দ্বারা নির্মিত। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি এমন কোনো নির্দেশনা দিতেন, তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তা অবশ্যই জানতেন। তার জানামতে, শেখ হাসিনা এমন কোনো নির্দেশনা দেননি।
ফ্যাসিস্ট আখ্যায়িত কামাল তার বক্তব্যে দাবি করেন, সে সময় পুলিশ নিজেদের এবং সম্পদ রক্ষায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মরণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা পুলিশের নিয়মশৃঙ্খলা বইয়েই নির্দেশিত আছে।
এরপর সাংবাদিক ফজলুল বারী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকারোক্তি এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে কামাল বলেন, "হয়েছে তো কি করার আছে? যার যার জান বাঁচাতে হয়েছে।"
তিনি আরও মন্তব্য করেন, "তারা তো অনেক মিথ্যাচার করছে, সাজাচ্ছে। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।" তাদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য শুরু হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল জানান, "ফেস করার কি আছে? তারা আমাদের কোনো উকিল যেতে দিচ্ছে না।"
প্রবাসী সাংবাদিকের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এসব বিচারকার্য নিয়ে ভারত কোনো হস্তক্ষেপ করবে কিনা, এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, এটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে নিজেদের "স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি" দাবি করে ভারত সব সময় তাদের পক্ষে থাকবে বলেও তিনি দাবি করেন।
এই ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মরণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনার বিষয়টি এআই দ্বারা নির্মিত বলার দাবি এবং সাবেক আইজিপির স্বীকারোক্তি নিয়ে তার মন্তব্য জনমনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহ দেশের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।