আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যে শঙ্কা, তা কেটে যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিগত তিন নির্বাচন, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। গত ১৫ বছরে যাদের চরিত্রহনন করেছি, তারা বিগত ১৫ মাসে ঠিক হয়ে যাবে- এটা আশা করা ঠিক নয়। আমরা কমিশনকে সতর্ক করেছি এদের বিষয়ে সচেতন থাকতে।

ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।

মঈন খান বলেন, প্রশাসনের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কেউ যেন আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই ভোট পরিচালনায় অংশ নিতে না পারে, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার কথা বলেছি।

মঈন খান বলেন, সাধারণ নির্বাচন একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ। ৩০০ নির্বাচনি এলাকায় ৪২ হাজার কেন্দ্র আছে। সরকার থেকে তারা ধার করে নিয়ে আসে। ভোটে ১০ লাখ লোক দরকার, তারা কারা? এরা সিভিল, পুলিশ, বিচার বিভাগ থেকে আসেন। বিগত ১৫ বছর প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল।

এ সময় আবারো জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের দাবি তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, যেদিন সাধারণ নির্বাচন হবে সেদিনই রেফারেনডামটি আমরা করছি।

৩৬ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকা, মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে।দক্ষ, সৎ, অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক সপ্তাহ পূর্ব হতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেরিয়্যাল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। সিসি ক্যামেরা সংস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে বা যত দ্রুত সম্ভব তা নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। যেমন, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনি সময়সূচি জারির পূর্বেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে। নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে। নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্প ছড়ায়- এমন সকল অপপ্রচার রোধ করতে হবে। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে বিধি-বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রকে ভোটারদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনের ক্ষেত্রে কোনক্রমেই নিজ জেলায় মোতায়েন করা যাবে না। কমিউনিটি পুলিশকে কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা যাবে না। ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং পার্সোন্যালসহ সকল পোলিং এজেন্টদেরকেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্র হতে সরাসরি ঘোষণা করতে হবে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সাথে করতে হবে।