বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ দিনেই একটি ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, তা নয়। এই রক্তের সিঁড়ি তৈরি হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য এ কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন কিংবা স্থায়ী অঙ্গহানি বরণ করেছেন, তারা সবাই জাতীয় বীর।

সরকার ও জনগণের মানসিক সংস্কার ব্যতিরেখে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার সফল হবে না মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এইভাবে গ্রহণ করি যা আমরা প্রতিদিন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাব, একটি জনকল্যাণমুখী সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাব, একটি জনকল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণের জন্য কাজ করব। আমরা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ইদানীং সবাই একটা কথা শুনি যে, সংস্কার হচ্ছে। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাক্সিক্ষত মানবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কারণ এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাটা যারা পরিচালনা করবে তাদের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার, জনগণের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার হওয়া দরকার এবং এই সমাজের মানুষের, আমাদের, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন তাদের, সম্মিলিতভাবে সবার মানসিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা যদি রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই দুইয়ে দুই চার হবে। তাহলেই আমরা একটা কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র পেতে পারব।

সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা জনগণ হিসেবে যদি মনে করি, সব দায়িত্ব সরকারের.. সেটা একটা ভুল ধারণা। রবার্ট কেনেডি প্রথমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, আমি তিন জেনারেশনকে কিছু দিতে পারব না, হয়ত থার্ড জেনারেশনকে কিছু দিতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি এমন হবে সরকার আমাদের জন্য কী করে তা নয়। জনগণ দেশের জন্য কী করবে সেটাও ভাবতে হবে? এটাই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাহলেই আমরা জনগণ এবং দায়বদ্ধ সরকার জনগণের কাছে এই উভয়ে মিলে একটা আমাদের কাংখিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা গতিশীল করতে পারবে।

গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ফ্যাসিস্টের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের রক্তধারায় লিখিত আছে এই ফ্যাসিস্টদের পতনের আন্দোলনে শহীদদের কাহিনী, কত নির্মম, কত নিষ্ঠুর আচরণ এদেশের মানুষ একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছ পেয়েছে সেই বেদনার ইতিহাস, সেই বেদনার ধারাবিবরণী সেই বিবরণীর উপন্যাস ভবিষ্যতে কত লিখিত হবে, অজস্র লিখিত হবে। আমরা তখন বুঝতে পারবো কত নিষ্ঠুর আচরণ স্বীকার করেছিলো এই ভূ-খন্ডের মানুষ। তারপরও আমরা দেখি, সেই ফ্যাসিস্টের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, বেদনা নেই, কোনো পরাজয়ের স্বীকারোক্তি নেই বরং দেখি দাম্ভিকতা। সেটা দেশের মানু্ষরে জন্য আমরা বলব, সেই স্বৈরাচারে দাম্ভিক আচরণ আমরা যতই দেখবো আমাদের মনে হবে যে, ভবিষ্যতে এরকম কোনোভাবে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি যাতে না হয় সেইভাবে যেন আমরা রাষ্ট্র ব্যবস্থাটা পরিচালিত করি।

সালাহউদ্দিন বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশি নির্যাতনসহ নানা প্রতিহিংসামূলক হামলায় ৭,১৮৮ জন ভুক্তভোগী হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০৯ জন গুমের শিকার, তার মধ্যে অনেকে এখনো ফিরে আসেননি, তারা আমার মতো সৌভাগ্যবান নয়। ২,৬৯৩ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার। জুলাই আন্দোলনে ১৪শর বেশি হত্যা, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত এবং ৫ শতাধিক ব্যক্তি দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এখনো সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে পারেননি। হাসপাতালের রেজিস্টার গায়েব, গণকবরের সন্ধান অজানা– তবুও উদ্যোগ নিতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাহ, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।