সুযোগ পেলে সকল ধর্মের মানুষের ন্যায্য সব দাবি পূরণ করবে জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সেই সুযোগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়ে হোক বা বিরোধী দলে থেকে হোক। জনগণের জন্য কাজ করতে হলে ক্ষমতার চেয়ে স্বদিচ্ছার প্রয়োজন বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অতিতে যারা সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে সনাতনী ভোট নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করেনি, তারা সনাতনীদের ধোঁকা দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ধোঁকা দেওয়ার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি উত্থাপিত রয়েছে। কেবল এই ৮ দফা দাবিই নয়, যৌক্তিক ও ন্যায্য সব দাবি পূরণে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি ফুলের বাগান। এই ফুলের বাগানে আর কোন হুতুম পেঁচা ঢুকতে দেওয়া হবে না। সম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এই জাতিকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় জাতি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, বিশ্বের সব কিছু অনুসরণ নয় আমাদেরকেও বিশ্ব অনুসরণ করবে আমরা এমন কাজ করতে পারি। সেজন্য তিনি সব ধর্মের মানুষের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
যাদের কাজের সাথে কথা মিল নেই তাদের সমর্থন না দিয়ে যাদের কথা ও কাজের মিল রয়েছে তাদেরকে সমর্থন দিতে তিনি উপস্থিত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি কথা ও কাজে জামায়াতে ইসলামীর মিল দেখেন তবেই জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিবেন।
জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে সব ধর্মের মানুষের উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংসদের আসনের একটি অংশ নির্ধারিত করে যোগ্যদের নির্বাচনের সুযোগ দিলে অবশ্যই যোগ্যরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এক্ষেত্রে সংখ্যা হবে আনলিমিটেড। যিনিই যোগ্য হবেন তিনিই প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে শুধু মুসলিমরা নির্বাচন করবে তা নয়, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে সমাজের যেকোন সৎ, যোগ্য, আদর্শবান, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক নাগরিক নির্বাচন করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্র পরিচালনের জন্য সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। ৫ আগস্টের বিজয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে তিনি সকল ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বিত সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অমুসলিমদের উপর জামায়াতে ইসলামী কোন জুলুম করেনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দের স্বীকারোক্তির জবাবে বলেন, তবে কারা অমুলিমদের উপর জুলুম করেছে, কারা অমুসলিমদের সম্পদ দখল করেছে তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে হবে। যারা হিন্দুদের পক্ষের লোক দাবি করে হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের উপর জুলুম করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করতে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
আমীরে জামায়াত বলেন, মসজিদ যদি পাহারা দিতে না হয়; তাহলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় কেন পাহারা দিতে হবে?- সব ধর্মের মানুষের সমান স্বাধীনতা তারাই দেয়নি যারা মূলত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে এবং করতে চায়। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রের কাছে সকল মানুষ, সকল ধর্ম সমান। ইসলামে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যে যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের নিশ্চিয়তা কেবলমাত্র ইসলাম দিয়েছে। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীনতা লাভ করবে। প্রত্যেক মানুষ গর্বের সাথে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে।
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের সমাজের চতুর্দিক থেকে দেখতে হবে উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত বলেন, অনেক রাজনীতিবিদ শুধু একদিক থেকে দেখেন। সেটা হচ্ছে নিজের দিক থেকে দেখা। এজন্য নিজ দলের কর্মীরা অপরাধ করলেও তারা সেটি দেখে না। অন্য তিন দিক থেকে না দেখার কারণেই পারিযে যেতে হয়, হারিয়ে যেতে হয়। এবং আগামীতেও পালিয়ে যেতে হতে পারে। তাই নিজের দিক থেকে না দেখে চতুরদিক থেকে দেখতে হবে।
তবে সমাজের কল্যাণ হবে। জামায়াতে ইসলামী সামনের দিক থেকে সমালোচনার রাজনীতি সমর্থন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভুল থাকলে সেটি সামনে এসে কেউ বললে আমরা সাধুবাদ জানাবো এবং সংশোধনের চেষ্টা করবো। পিছন থেকে সমালোচনায় সমাজ উপকৃত হয় না। তাই তিনি রাজনৈতিক হিংসা, প্রতিহিংসা ভুলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি সমাবেশ।
আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দ্বীন বন্ধু রায়, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, ইমান্যুয়েল ব্যাপ্টিষ্ট চার্জ পাস্তর তনান রায়,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহকারী সেক্রেটারী প্রিন্সিপাল অনুপম বড়ুয়া, সিদ্ধেশরী সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি সাবেক ডিআইজি নির্বাক চন্দ্র মাঝি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সুভাশীষ বিশ্বাস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী ড. আব্দুল মান্নান, মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল , কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, শামছুর রহমান, মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরী দক্ষিণের শূরা ও কর্মপরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং সর্ব ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।