হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনে (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ছাত্র জীবন থেকে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে সাহসিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯০ সাল থেকে বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলার মাটি মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিবিদের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠকদের তুলে ধরা হলো।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন : এই সাহসী ও প্রতিভাবান জামায়াত নেতা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ১৯৬৭ সালের ২৮ আগস্ট খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম শেখ মো. এলাম উদ্দীন এবং মাতার নাম-মরহুমা মরিয়াম বেগম। তার স্ত্রী মিসেস নাসিরা সুলতানা। তিনি চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সকলের বড়। তার এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। তারা উভয় উচ্চ শিক্ষিত এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সু-প্রতিষ্ঠিত।

শিক্ষা জীবন : মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ১৯৮১ সালে খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল, একই মাদরাসা থেকে ১৯৮৪ সালে আলিম, ১৯৮৭ সালে বাগেরহাটের রামপালের ইসলামাবাদ ফাযিল মাদরাসা থেকে ফাযিল এবং ১৯৮৯ সালে খুলনা আলিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি পিরোজপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বি এ এবং খুলনা সরকারি বি এল কলেজ থেকে এম এ পাস করেন।

কর্মময় জীবন : ১৯৯০ সালে বটিয়াঘাটা উপজেলার অন্তর্গত সুন্দরমহল দাখিল মাদরাসার সহ-সুপার হিসেবে মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল রণজিতের হুলা তরিকুছুন্নাত দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে যোগদান করে অদ্যবধি সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক জীবন : ছাত্র জীবন থেকেই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসাবে সাহসীকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। ১৯৯০ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীরের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

সাক্ষাৎকার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলাা মজলিসে শূরার সদস্য ও বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) সংসদ সদস্য প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অবহেলিত এ জনপদে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছেন। একান্ত স্বাক্ষাৎকারে দৈনিক সংগ্রামকে তিনি জানান তার রাজনৈতিক যাত্রা, দর্শন এবং জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের বটিয়াঘাটা উপজেলা সংবাদদাতা তরিকুল ইসলাম।

দৈনিক সংগ্রাম : আপনি কত সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : ১৯৯০ সালে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি।

দৈনিক সংগ্রাম : এর আগে আপনি অন্য কোন দলের সাথে যুক্ত ছিলেন?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : ছাত্রজীবনে আমি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলাম।

দৈনিক সংগ্রাম : আপনি কেন এমপি হতে চান?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : ইসলামে কোন পদ পদবী চাওয়া বা পাওয়ার জন্য নিজ থেকে প্রার্থী হওয়ার কোন সুযোগ নাই বা উচিতও নয়। আমি নিজ থেকে প্রার্থী হইনি, জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্তে মনোনীত হয়েছি। আমার লক্ষ্য হলো ইনসাফ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যাতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হয়। এবং মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে পারে। সংসদ সদস্য না হলেও এ সকল কাজ বাস্তবায়নে আমৃত চেষ্টা থাকবে। আমি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে কাজ করে যাচ্ছি।

দৈনিক সংগ্রাম : আপনি ইতোপূর্বে কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন কি?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : হ্যাঁ। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। পরবর্তীতে জোটগত নির্বাচন হওয়ার কারণে এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয়নি।

দৈনিক সংগ্রাম : দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনকে দিয়ে আপনার ভাবনা কি ?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : খুলনা-১ আসনকে ঘিরে আমার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমত: জাতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য যথাযথ তৎপর থাকবো ইনশাআল্লাহ। বটিয়াঘাটা-দাকোপে প্রচুর উর্বর ও সম্ভাবনাময়ী এলাকা কিন্তু নদীমাতৃক হওয়ার কারণে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট এমনকি দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা করবো। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং সহজ না হওয়ায় এলাকার উৎপাদিত শস্য ও সুন্দরবনের সম্পদ তার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সে কারণে কৃষকেরা নিজেদের জীবন যাত্রাকে উন্নয়ন করাতে পারছে না। তাছাড়া প্রতি বছর নদীভাঙ্গনে কৃষকরা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে ফসল, বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর, সহায় সম্বল এমনকি মাথা গুজার ঠাইটুটু। এই আসন থেকে আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে নদী ভাঙ্গনের টেকসই সমাধানসহ অবহেলিত কামারখোলা, নলিয়ান, সুতারখালী, কালাবগিসহ প্রত্যেকটা গ্রামকে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে খুলনা-১ আসনকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

দৈনিক সংগ্রাম : সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এলাকার কোন কাজগুলো আগে করবেন ?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : প্রথমেই আমার এলাকার নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানে কাজ করবো, এবং খনন করবো। দাকোপ উপজেলার ভদ্রা নদীর মুখে ফেরি বসিয়ে খুলনা-কালাবগী যাতায়াতের ব্যবস্থা করবো। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। হাট, ঘাট, কালভার্ড, ব্রিজ, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ সংস্কার এবং বিশেষ করে অমুসলিম ভাইবোনদের সকল দাবি, আধিকার সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা করবো। ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রতা, ঘুষ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্তসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে । আমরা একটা পুর্ণাঙ্গ ন্যায় ভিত্তিক মানবিক ও কারিগরি শিক্ষা নীতির বাস্তবায়ন করতে কাজ করছি। স্থানীয় চাহিদা ও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উন্নয়ন মুলক উদ্যোগ গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ। সর্বপরি দাকোপ-বাটিয়াঘাটার উন্নয়নে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

দৈনিক সংগ্রাম : ৩৬ জুলাইয়ের পর জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সাধারণ জনগণের আগ্রহ বেড়েছে এর কারণ কি?

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশ ও দেশবাসীর জন্য যে খেদমত করে আসছে তা বিগত দিনের সরকারগুলো বিভিন্ন অপপ্রচারের দেয়াল তুলে জনগণের চোখে পর্দা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। ৩৬ জুলাই এর মাধ্যমে সেই পর্দা সরে গিয়ে সত্যটা জেনে গেছে। এখন মানুষ সত্যকে জানতে ও বুঝতে পেরেছে। তাছাড়া ৩৬ জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান ছিলো, ‘অন জাস্টিস’ ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দাবিতে। জামায়াতে ইসলামী এই লক্ষ্যে পূর্ব থেকেই আল্লাহর বিধান ও রাসুল (সা.) এর পথ অনুস্মরণ করে কাজ করছে। এ আন্দোলনে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, জান মাল বাজি রেখে কাজ করছেন। ফলে জনগণ আমাদেরকে মূল্যায়ন করছে। আলহামদুলিল্লাহ।

দৈনিক সংগ্রাম : আমাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। দাকোপ-বটিয়াঘাটার মানুষের সার্বিক উন্নয়ন করতে পারি ও সৎ নির্ভীক থেকে মানুষের পাশে থাকতে পারি তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি।