বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, একটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। পরিষ্কার ঘোষণা করছি, রক্ত দিয়ে যে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, প্রয়োজনে আবার রক্তের সাগর প্রবাহিত হবে, তবু বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে। এই জুলাই সনদকে আমরা কোনো কাগজের সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। জুলাই সনদকে আমরা আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু; সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন; আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ও জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়ে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি গাউসুল আযম হাদী, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও সেক্রেটারি রাকিব হাসান, জামায়াতের অফিস সেক্রেটারি মীম মিরাজ হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, মাওলানা শেখ মো. অলিউল্লাহ, খুলনা সদর থানা আমীর এস এম হাফিজুর রহমান, সোনাডাঙ্গা থানা আমীর জি এম শহীদুল ইসলাম, খালিশপুর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতপুর থানা আমীর মাওলানা মুশাররফ আনসারী, আড়ংঘাটা থানা আমীর মাওলানা নিয়াজ আনসারী, লবণচরা থানা আমীর মো. মোজাফ্ফর হোসেন, হরিণটানা থানা আমীর মাওলানা আব্দুল গফুর প্রমুখ। পরে এক বিক্ষোভ মিছিল যশোর-খুলনা মহাসড়ক হয়ে দৌলতপুর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মহানগরী আমীর আরও বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, গণহত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে অপরাধে অপরাধী, জাতীয় পার্টি এবং ১৪দলও একই অপরাধে অপরাধী। তাই ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দাবিগুলো এখন দেশের জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অতিদ্রুত জনগণের এইসব ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কি জুলাই বিপ্লবের আকাক্সক্ষা ছিল? অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে যেনতেন উপায়ে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত সেই বিশেষ দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করেছিল। আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে দেশপ্রেমিক জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। যার ফলে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়। এটি ছিল ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান। ঐতিহাসিক এই গণঅভ্যুত্থানের আইনি ভিত্তি দেওয়া ছাত্রজনতার অধিকার।