সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন পরস্পর নির্ভরশীল নয় মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় প্রশ্ন সবাই যেটা করে, তা হলো সংস্কার, বিচার, এবং নির্বাচন। এগুলো কি পরস্পর নির্ভরশীল বিষয়? এগুলো মিউচুয়ালি বিষয়। ইন্টারডিপেন্ডেন্সির ওপরে কোনোটা নেই। তার মানে এগুলো পরস্পর নির্ভরশীল বিষয় নয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারের নাগরিক উদ্যোগে নাগরিক কোয়ালিশন- আগামীর সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে কোনো রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে পারবে না মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছে যে প্রতিশ্রুতি যে বাস্তবায়ন হবে তার গ্যারান্টি কি? প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্যেই এই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার সমগ্র পলিটিক্যাল পার্টিগুলো শুধু ফ্যাসিবাদ বাদে সরকার, জনগণ সবাই মাসের পর মাস পরিশ্রম করতে করতে এখন এক বছর পার হয়ে গেছে এই ডকুমেন্টটা প্রণয়ন করতে, সেটা সমগ্র জাতি দেখেছে ওপেন এয়ার ব্রডকাস্ট হয়েছে। আমরা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি প্রত্যেকটি পার্টি প্রস্তাব দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন দিস্তায় দিস্তায় কাগজ আমরা পেয়েছি আমরাও দিয়েছি, এগুলো ফ্রেম হচ্ছে একটা ঐক্যমত্য পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে ফাইনালি এবং সেটা এমবডি হচ্ছে.. সেটা সমগ্র জাতি দেখবে এই প্রতিশ্রুতিগুলো যদি সিগনেচারড হয় এবং সেটা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হয় জাতির সামনে সেটা একটা ডকুমেন্ট হিসেবে থাকবে এবং সারা পৃথিবী দেখবে সেটা ওয়েবসাইটে যাবে। এই ডকুমেন্টটা আর্কাইভে থাকবে, এই ডকুমেন্টটা বাস্তবায়ন না করে কোন পলিটিক্যাল পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে? আমি বিশ্বাস করি না।
সালাহ উদ্দিন বলেন, অনেকে বলে যে আপনারা বাস্তবায়ন করবেন না। আমি বলি যে, বিএনপি যে সরকার গঠন করবে এটা কেউ শপথ করে বলেছে? আমাদেরকে কেন দায়ী করেন? আমি বলব, যারা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন সামনে শব্দটা ওইভাবে হওয়া উচিত, তারাই সবাই মোরালি অবলিগেটেড থাকবে, এটা বাস্তবায়নের জন্য এই সনদের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, কেউ না চাইলেও এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট হিসেবে। কারণ আমরা এই ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছে দিয়েছি এটা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটা নতুন গণতান্ত্রিক শক্তিশালী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।
নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন বলেন, নারী আসনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকেই ৫% প্রস্তাব করা হয়েছে, অন্য কোন দলের পক্ষ থেকে নয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব এক‘শ আসন উন্নীত করা মহিলাদের নারী আসনটা এইবার। এখন গ্র্যাজুয়ালি না গেলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামতও নিতে হবে, তাদেরকেও একসাথে নিতে হবে এবং আমাদের সমাজের মানে রাষ্ট্রে নারী সমাজের অগ্রগতির বিষয়টাও আমাদেরকে নজরে রাখতে হবে।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমান সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলেও এখনো নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করতে পারিনি। সময় আছে এর ভেতরে আশা করি সবাই আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা সেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবো। আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব দলে একমত।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে যে প্রসঙ্গটা এখনই বাস্তবায়ন হতে হবে.. সেটার কোন পদ্ধতি আছে কিনা আমার জানা নাই। কিন্তু সংবিধানের সংশোধন বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য সেই কমিটমেন্টটা যাতে আমরা দৃঢ় করতে পারি সেজন্য কোন পদ্ধতি থাকতে পারে।
জুলাই হত্যার বিচার নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণ বুঝেছে বিচার কোনো শর্তসাপেক্ষ বিষয় নয়। বিচারের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। বিচার কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে। যে সরকারই আসুক, তাকে সেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।