বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় গিয়ে রাজা নয় জনগণের সেবক হতে চায়। দেশের মানুষের খেদমত করাই হবে আমাদের উদ্দেশ্য। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে অনেকেরই পরিকল্পনা আওয়ামী স্টাইলে নির্বাচন করা। আওয়ামী স্টাইলে নির্বাচন হলে জুলাই যুদ্ধে মানুষের জীবন দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই। বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছে আগামী দিনে একটি সুস্থ রাজনীতি উপহার দেয়ার জন্য। আর সুস্থ রাজনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কোন বিকল্প নাই।

গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জামায়াতের এক প্রীতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই দেশটা কারো বাবার বা কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এই দেশ ১৮ কোটি মানুষের সম্পদ। এই দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তা দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ইসলামের পক্ষে রায় দেবে। বাংলাদেশে আর কোন ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেব না। বাংলাদেশের মানুষ যদি আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আমরা বসবো না, ইসলামকে বসাবো, ইনশাআল্লাহ। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আমরা দুর্নীতি, সন্ত্রাস. চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. আহসান হাবীব ইমরোজ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে টাংগাইল জেলার গৌরবোজ্জ্বল অবদান রয়েছে। প্রফেসর গোলাম আযম টাংগাইল সদর আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। ধনবাড়ির নওয়াব আলী চৌধুরী প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবি জানিয়েছিলেন- পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে তা পরিণতি লাভ করে। ভারত বর্ষের প্রথম মুসলিম প্রিন্সিপাল ছিলেন ইসলামপন্থী টাংগাইলের ইব্রাহিম খাঁ। সুতরাং আমাদেরকে টাংগাইলের ৮টি আসনেই ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

টাঙ্গাইল জেলা জামায়াত আয়োজিত প্রীতি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য আহসান হাবিব মাসুদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের জামালপুর জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুস সাত্তার, নাটোরের জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ড. মীর নূরুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবির।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় কার‌্যকরী পরিষদ সদস্য ও টাংগাইল শহর সভাপতি মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দিন, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রফেসর ডা. রুহুল আমিন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ ইকবাল,ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় কার‌্যকরী পরিষদ সদস্য এডভোকেট শাফিউল আলম, ডা. মুজাহিদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শিবিরের জেলা সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।

কুরআন পুড়িয়ে , অফিস ও বাড়িতে আগুন দিয়ে ইসলামি আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না

পাবনা সংবাদদাতা: কুরআন পুড়িয়ে, অফিস ও বাড়ি বাড়িতে আগুন দিয়ে ইসলামি আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। কথাগুলো বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।

তিনি গত সোমবার সকালে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা সদরের সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলা জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নকিউল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও জাতীয় সংসদের পাবনা-৪ ( ঈশ্বরদী -আটঘরিয়া) আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, সংগঠনের বগুড়া অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, পাবনা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির ও আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি ও পাবনা সদর পৌরসভার মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল গাফফার খান।

ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল আলিম মাসুদের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, পাবনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এস এম সোহেল, আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা আমিরুল ইসলাম, আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম মোল্লা, মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুল ইসলাম কচি, ইসলামী ছাত্র শিবিরের পাবনা শহর শাখার সভাপতি ফিরোজ হোসেন প্রমূখ।

আটঘরিয়ায় জামায়াত নেতাকর্মীরা আজান দিতে ও নামাজ পড়াতে পারবে না বিএনপি নেতার এমন কথার উদ্ধৃতি দিয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আপনারা জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চোখ রাঙাবেন না, আমরা ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কারো চোখ রাঙানিতে ভয় পাই না, আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না এবং পরোয়া করি না।

তিনি বলেন, আমরা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নই, সমাজে যারা অন্যায়, জুলুম ও অপকর্ম করে তাদের বিরুদ্ধে, যারা অসামাজিক কার্যক্রম করবে তাদের বিরুদ্ধে।

তিনি আরো বলেন, আমরা কারো ভোট জোর করে নেব না, কাউকে আমরা ভোট জোর করে নিতেও দেবো না। আমরা ভোট কেন্দ্র দখল করবো না আমরা কাউকে ভোট কেন্দ্র দখল করতেও দেবো না। কেউ ভোটকেন্দ্র দখল করতে আসলে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে।

প্রধান অতিথি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আমরা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং ফেয়ার একটি ক্রেডিবল নির্বাচন চাই। নির্বাচনে যেন বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত ব্যালটের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারে সে দাবী সরকারের কাছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন সচেতন, ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়েছে, আর কোন ফ্যাসিবাদের দোসরকে বাংলাদেশের ঠাঁই দিবে না। ফ্যাসিবাদ বিদায়ের পরে অনেকেই মনে করেছিলেন দেশের মালিকানা ওনাদের, কিন্তু এদেশের মালিকানা ১৮ কোটি মানুষের, এদেশের সরকার পরিচালনার পদ্ধতি নির্ধারণ করবে ১৮ কোটি মানুষ।

তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, আমাদের উপর ফ্যাসিবাদী সরকার যে জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শহীদ করেছে আমরা সেই সকল শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, আগামী নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে শহীদের রক্তের বদলা নিব, ইনশাল্লাহ।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন, ছাত্র জনতার জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন মুক্তভাবে কথা বলতে পেরেছি, জুলাই আন্দোলনের মূল্যায়ন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বর্তমান পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে চোর পালিয়েছে আর কোন নতুন চোরদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চাই না।