বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, যারা বিগত সময়ে দেশ পরিচালনা করেছে, তারা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের নানারকম দফা দিয়ে জনগণের সাথে তামাশা করছে। যারা ক্ষমতায় বসলে রাষ্ট্র দুর্নীতি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়, তারা আবার ক্ষমতায় বসতে পারলে রাষ্ট্রের পরিণতি কী হবে সেটি দেশের জনগণ জানে। তাই আগামী নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার, লুটেরাদের বয়কট করবে। পিআর পদ্ধতির সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই তারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে রাজি নয়। কারণ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সুযোগ থাকবে না। প্রতিটি ভোটারের ভোটের মূল্যায়ন হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী আমলেও ১০ মাসে যাদের দেড়শো নেতাকর্মী খুন হয়নি অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিগত ১০ মাসে নিজেরাই নিজেদের দেড়শো নেতাকর্মীকে খুন করেছে! যারা দলীয় একটা কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে করতে পারে না। দেড়শো কাউন্সিলর থাকলেও ভোট পড়ে ১৫৭ টা! সেই দলের দ্বারা জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কল্পনাও করা যায় না। এমনকি তারা সুষ্ঠু ভোটের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সহযোগিতা করবে না। কারণ তারা জানে সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের পরাজয় নিশ্চিত। নিজেদের পরাজয়ের গন্ধে তারা সারাক্ষণ জামায়াতে ইসলামীর পরাজিত হবে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। জামায়াতে ইসলামী জয়-পরাজয়ের হিসাব করে না, জামায়াতে ইসলামী বারবারই বলছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দিন।
গত বুধবার রাতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে প্রশিক্ষিত সমাজকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরীর হলরুমে পল্টন থানা আমীর ও মহানগরীর সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন এবং ড. আব্দুল মান্নান। মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, মুগদা থানা আমির মতিউর রহমান, কদমতলী থানা আমির আব্দুর রহিম জীবন, মুগদা পূর্ব থানা আমির মো. ইসহাক, মতিঝিল উত্তর থানা আমির শামছুল বারি, বংশাল থানা আমির মাহবুবুর রহমান, সমাজকল্যাণ ট্রেইনার যথাক্রমে ইকবাল হুসাইন, আল্লামা ইকবাল, বায়েজিদ হাসান, গাজী মাহফুজ বুলবুল, কেফায়েত উল্লাহ, আব্দুল মুনিম খান প্রমুখ।
ড. মাসুদ বলেন, বিগত ১৭ বছর জামায়াতে ইসলামী ছায়া সরকার গঠন করে দেখিয়েছে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র কেমন হবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় না গিয়েও সমাজের কল্যাণে, মানুষের প্রয়োজনে যেসকল সামাজিক ও মানবিক কাজ করেছে এসব কাজ রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু রাষ্ট্র সেদিকে মনোযোগী হয়নি। যার কারণে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের সব শ্রেণিপেশার লোকজনের পাশে সমানভাবে সামাজিক সেবার হাত বাড়িয়েছে। দলমত, ধর্মবর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে জামায়াতে ইসলামী একটি ছায়া সরকারের ভূমিকায় সমাজের মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। বেকারত্ব দূরীকরণে যুবকদের বিভিন্ন কর্মমূখী প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তুলতে সেলাই মেশিন, গবাদি পশু বিতরণ, অসুস্থদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার বিতরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় পাহারাদারের ভূমিকায় নিয়োজিত সহ দুর্যোগ-দুর্দিনে মানুষের পাশে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে ছিল, আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে একইভাবে জামায়াতে ইসলামী মানুষের পাশে থাকবে। নেতৃত্বের জন্য সেবার বিকল্প নেই তাই জামায়াত কর্মী মানেই সমাজকর্মী। এই সমাজকর্মীর ভূমিকা পালন করতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন ও রক্ত দিতে হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদের কারণেই জামায়াতে ইসলামী আধিপাত্যবাদের টার্গেটে পড়ে। এরপরই জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে একে-একে আটক করে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক হত্যা করে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে জীবন দিয়েছে, তবুও আধিপাত্যবাদ-ফ্যাসিবাদের কাছে মাথানত করেনি কোন আপোষ করেনি। বিদেশে বসে গণতন্ত্রের তকমা দেয়নি। কোন নেতার ভিতরে ন্যূনতম দেশপ্রেম থাকলে, তিনি সবার আগে দেশ মুখে বলে বিদেশে বসে দল পরিচালনা করতে পারেন না! জামায়াতে ইসলামী মুখে যা বলে, বাস্তবেও তাই করে। জামায়াতে ইসলামী জনগণকে ধোঁকা দিতে আসেনি, জনগণের সেবা করতে এসেছে। তিনি উপস্থিত প্রশিক্ষিত সমাজকর্মীদের সমাজ সেবা করার পাশাপাশি সমাজকর্মী গঠনের আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।