বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডক্টর এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত এই দেশে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে জুলাই সনদ রচনা সম্পন্ন করে তা বাস্তবায়ন করা। সরকার জনগণের ন্যায় সংগত দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে ২৪ এর জুলাইয়ের মতো জনগণ তাদের ভোটাধিকার আদায়ে আবারো রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই ছাত্র- জনতার রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ৩৬ দিনের গনআন্দোলনে ফ্যাসিস্টের বিদায় হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র- জনতা আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন। জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের যথাযথ স্বীকৃতি নেই। যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার করার শামিল।

ডঃ হামিদুর রহমান আযাদ আরো বলেন, বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ব্যর্থতার প্রধান কারণ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কাল টাকা ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে পি,আর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আরো বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন থেকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার কারনে ভোট প্রদানে মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ভোট প্রদানে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী মাঠে সকল দলের সমান সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে সরকারের ভুমিকা এখনো প্রশ্ন বৃদ্ধ। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদ আরো বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি একটি নির্বাচন মুখি দল। গনতান্ত্রিক পন্থায় বাংলাদেশে একটি কল্ল্যাণ রাস্ট্র প্রতিষ্টা করার জন্য জামায়াত ইসলামি প্রতিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে আসছে। তাই জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জমা অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করতে নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার কলঘাট ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। জামায়াতে ইসলামী মহেশখালী উপজেলা উত্তরের আমির মাষ্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মৌলানা বশির আহমেদের সঞ্চালনায় মাতার বাড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত দিন ব্যাপি কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মোঃ জাকের হোছাইন, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের মহেশখালী উত্তরের সভাপতি আনছারুল করিম, মাতার বাড়ি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন, ধলঘাট ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা অধ্যাপক শওকত আলী, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি হাফেজ সরওয়ার আলম, ছাত্র শিবিরের ইউনিয়ন সভাপতি ওমর ফারুক, সহ ধলঘাট, ও মাতার বাড়ির প্রত্যেক কেন্দ্র কমিটির সভাপতি বৃন্দ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

জুলাই সনদ একটি অসম্পূর্ণ দলিল

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, জুলাই সনদ একটি অসম্পূর্ণ দলিল। এর কিছু অংশ বিপজ্জনক। জুলাই সনদে ৪৭ অনুপস্থিত। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান নাই। দেশের গণমানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন জুলাই সনদে হয় নাই। শুধুমাত্র একটি দল ছাড়া কেউ জুলাই সনদকে স্বাগত জানায় নাই। বুধবার ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান স্মরণে বাংলাদেশ লয়ার্স কাউন্সিল চট্টগ্রামের উদ্যোগে আইনজীবী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও গণহত্যার বিচার ছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের পক্ষে নয়। তিনি আরও বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ। ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, বার কাউন্সিলের রেকর্ড অনুসারে সারাদেশে আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় দেড়লাখ। মামলা রয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মামলা বেড়েছে। ইচ্ছে করে তাদের আইনজীবী মামলা গুলো ঝুলিয়ে রেখেছিল বিরোধী দলগুলোকে দমানোর জন্য। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল এই জুলাই সনদ। আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, ন্যায় ইনসাফের বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, শর্টকাট আয়ের দিকে না গিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে আইনজীবীদের। যে যেই দলই করেন না কেন আমরা সিনিয়রদের সম্মান করে থাকি৷ তারাও সহযোগিতা করে থাকেন। আইনজীবীর মূখ্য দায়িত্ব বেঞ্চের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। অনৈতিকতার আশ্রয় নিলে ভবিষ্যতে সেসব আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তরুণ আইনজীবীদের সততার দৃষ্টান্ত রাখা উচিত। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইনজীবীদের ভূমিকা পালন করতে হবে। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ লয়ার্স কাউন্সিল চট্টগ্রামের সভাপতি এডভোকেট আবদুল মালিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি এডভোকেট শামসুল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন,সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী ও ডা. এ কে ফজলুল হক, ডা. আবু নাছের, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি, ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহাম্মদ আলী প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডভোকেট কফিল উদ্দিন, সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, এডভোকেট আরিফুর রহমান, এডভোকেট আবদুল মোতালিব, এডভোকেট শাহাদাত হোসেন, এডভোকেট মিনহাজ উদ্দিন, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক এড,আবুল মোজাফফর, এডভোকেট ফজলুল বারী প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সেক্রেটারি এডভোকেট হাসান আলী, চট্টগ্রাম জেলা দুদকের পিপি এডভোকেট কবির আহমদ প্রমুখ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন এড. জসিম উদ্দিন সরকার।