রাষ্ট্রীয়ভাবে ৫ মে ‘শাপলা গণহত্যা দিবস’ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সাজিদুর রহমানের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

হেফাজতে ইসলাম জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পক্ষান্তরে অনেক বছর ধরে এ দেশের আলেম-ওলামা ও সচেতন ধর্মপ্রাণ অভিভাবকরা প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়ে এলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ মুসলিম-অধ্যুষিত বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ সচেতন অভিভাবকদের মতামত না নিয়ে মুসলমান ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষায় গানবাদ্য চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা ষড়যন্ত্রমূলক ও ইসলামবিরোধী পদক্ষেপ।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে কথিত জঙ্গিবাদ ঠেকানোর দোহাই দিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রগতিশীল ও ধর্মবিমুখ করার উদ্দেশ্যে একদল ইসলামবিদ্বেষী উগ্র সেক্যুলারের সঙ্গে মিলে শিক্ষাব্যবস্থায় গানবাদ্য ঢোকানোর কৌশল নেওয়া হয়। এখন সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার চেষ্টার অংশ হিসেবে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা সংক্রান্ত গেজেট জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও দাবি জানিয়েছে। এ সত্ত্বেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, কোনো জবাবও দেননি।

সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যা ও পিলখানা ট্র্যাজেডি স্মরণে নতুন দুটি জাতীয় দিবস করা হলেও ৫ মের গণহত্যার দিনকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হয়নি। আমরা মনে করি, সচেতনভাবে এটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সেক্যুলার চক্র ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ দেশের আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ জনতার ত্যাগ-তিতিক্ষাকে আমাদের জাতীয় জীবনে স্থান দিতে চায় না। এটি হতে দেওয়া যাবে না। সরকারকে অবিলম্বে ৫ মে দিনটিকে শাপলা চত্বর গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। তা নাহলে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে আমরা ধরে নেব এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ। অন্য দুটি দাবি হলো- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনতিবিলম্বে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা জারি করতে হবে; কুরআন অবমাননার দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দীর্ঘ বিচারহীনতাপ্রসূত আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠেকাতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মালম্বীর ধর্মীয় অনুভূতির সুরক্ষায় ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর আইন করতে হবে। এ সময় হেফাজত মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে নাচ-গান শেখাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন না। সংগীতের চেয়ে মুসলমানদের সন্তানদের ধর্ম শিক্ষা জরুরি। কোরআন আবমাননার জন্য শাস্তিযোগ্য আইন করতে হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে দোয়া ও মোনাজাত করেন হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি প্রমুখ।