জনতা পার্টি বাংলাদেশ নামে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, মহাসচিব বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগস্থ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে নতুন দলের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হয়েছেন গোলাম সারোয়ার মিলন। ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছেন- রফিকুল হক হাফিজ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবিএম ওয়ালিউর রহমান, রেহানা সালাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এমএ ইউসুফ, সৈয়দা আজিজুন নাহার, গোলাম মেহরাজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম, নির্মল চক্রবর্তী। দলে আরও রয়েছেন-সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু, অ্যাডভোকেট শিউলি সুলতানা রুবী, নাজমুল আহসান, জামাল উদ্দিন, শাহাদত হোসেন, আসাদুজ্জামান ও জাকির হোসেন লিটু। সমন্বয়কারী নূরুল কাদের সোহেল, সহ-সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর, জাকির হোসেন ও ফাতেমা বেগম।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ আবদুল করীম, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান মহসিন রশীদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এ বি এম খন্দকার গোলাম মুর্তজা, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল নাজিম উদ্দিন, নৈতিক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমসা আমিন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, গণআজাদী লীগের একাংশের সভাপতি আতাউল্লাহ খান, গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, আমজনতা দলের দপ্তর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, শহীদ আসাদের ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান কায়সার, লন্ডন প্রবাসী শেখ মহিউদ্দিন। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গোলাম সারওয়ার মিলন, আসাদুজ্জামান এবং জুলাই আন্দোলনে আহত ওয়াহেদ এবং নিহত পরিবারের সদস্য মিঠুন হাসানসহ বিভিন্ন আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে জনমত গঠনে সক্রিয় ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯৩ সালে স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর থেকে তিনি এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে নির্বাচন করার আহ্বান জানানো হলেও এবারই প্রথম সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন তিনি। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় দুই ডজন নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করবে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ বলে জানিয়েছেন সদ্য আত্মপ্রকাশ হওয়া দলটির চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে যেভাবে সততার সঙ্গে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, ঠিক তেমনিভাবে কাজ করে যাব। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বিগত সরকারগুলো থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে, এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমত হচ্ছে, আমরা কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই নতুন দল গঠন করেনি। ২০২৪ সালের যে নির্বাচনটি হয়েছে সেখানে অনেকে বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা তুলে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে ৭০টি মামলা ছিল, সে মামলার একটির রায় ঘোষণা করা হবে, এমন ভয় দেখিয়ে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা করেছে। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে যারা নির্বাচনে গেছে, ২০২৪ সালে নির্বাচনে যাওয়া আর ২০১৮ সালে নির্বাচনে যাওয়ার মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য দেখি না। ২৪ সালের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু একই সঙ্গে যারা ১৮ সালে নির্বাচনে গেছেন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন, তাদেরও তো দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।
জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি মধ্যপন্থি দল হবে জনতা পার্টি। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদে নতুন দলটি দৃঢ় অবস্থান থাকবে। এছাড়াও জুলাই বিপ্লবের একটি সনদ জাতির জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। সবাইকে নিয়ে নতুন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন মহাসচিব। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ দল থেকে বহিষ্কারের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত দূরত্ব হয়েছে-সেটার কারণ হচ্ছে, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার অনুমতিতে ২০১২ সালে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি যখন আমরা পুনরুজ্জীবত করি তখন আমরা বলেছিলাম যে, ইনসাফ কায়েম কমিটি একটা গণঅভ্যুত্থান করতে চায়, যে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। আমাদের এই আহ্বানকে বিএনপির কোনো কোনো নেতা ভুল বুঝেছিলেন। তারা মনে করেছেন যে, আমরা দলকে বোধহয় ভাঙতে চাই। সে কারণে আমার সঙ্গে বিএনপির একটা বিচ্ছেদ ঘটে।
পার্টি নাম নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গ: চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দল আত্মপ্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার তাকে আইনি নোটিস পাঠান ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টির’ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সবুজ খান। দুটি দলের নামের মিলের কারণে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টির’ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে অভিযোগ করে ইলিয়াস কাঞ্চনকে তার দলের অন্য নাম দেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “বাংলাদেশ আগে-পরে এরকম হতে পারে তো। এটা তো একই টাইপের নয়। না, এটাতে (দলের নামকরণ) কোনো কনফ্লিক্ট হওয়ার কারণ নেই। তারপরে আরও একটা কথা হচ্ছে, উনি (উকিল নোটিসকারী) যে নামটির কথা বলেছেন, সেই নামটি কি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হয়েছে? নির্বাচন কমিশনের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন? সেগুলো না জমা দিয়ে এগুলো করার কোনো মানে হতে পারে না। জনতা পার্টি বাংলাদেশের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র গোলাম সারওয়ার মিলন বলেন, জাতীয় পার্টি নামে নিবন্ধন চারটা, জাসদের নামে চারটা নিবন্ধন। সুতরাং এখানে যারা জনতার নাম দিয়ে দল করেছেন, আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। চেয়ারম্যান সাহেব, উনি যথার্থ জবাব দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে যখন নিবন্ধন হবে, যাকে দেবে, যে যোগ্যতা অর্জন করবে- সেই ফাইনালি থাকবে। পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, জনতার নাম দিয়ে ভবিষ্যতে তো এমনও হতে পারে- আমাদের চিন্তা-চেতনার সাথে এক হয়ে জাতীয় জনতার জোটও হতে পারে। এই নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নাই।