জুলাই মঞ্চ-People Against Genocide ঘোষিত অক্টোবর মাসে ৫ টি জবাবদিহি মিছিলের তৃতীয়টি আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। "দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি দুর্নীতি প্রশ্রয় কমশন? কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন কোন পথে" শিরোনামে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩.৩০ মিনিটে এই কর্মসূচীটি পালন করে জুলাই মঞ্চ-People Against Genocide.
বিগত শাসনামল ও বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাটের সাথে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কর্মসূচীটি থেকে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে জুলাই মঞ্চের মুখপাত্র(সদস্য সচিব) জনাব সাকিব হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করার পর ২০০৪ সালে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে গঠিত হয় দুর্নীতি দমন কমিশন। বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খিত এই কমিশন কার্যত বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কার্যকরী কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিগত ১৬ বছর। এই ১৬ বছরের দুঃশাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় শত বিলিয়ন অর্থ পাচার হয়েছে, দেশের প্রতিটি সরকারী দপ্তর দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছিলো। কিন্তু আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্বিকার দেখেছি। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করার মত মেরুদন্ড কখনোই অর্জন করেনি এই কমিশন। উল্টো কেউ কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থা গ্রহণ করলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি দপ্তরের পাশাপাশি খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনও জড়িয়ে পড়েছিলো মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতিতে। যা দুর্নীতির সাথে কমিশনের একটা অপ্রতিরোধ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা নানা উপায়ে দুর্নীতিবাজদের সাথে আতাত করে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ।
বাংলাদেশকে দুর্নীতি, খুন ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করার পর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় খুনী ও লুটেরা সরকারের। জনগণ নতুন করে আশায় বুক বাধে যে, এবার হয়তো বাংলাদেশ সঠিক পথে দিশা পাবে। বন্ধ হবে রাষ্ট্রের অর্থ লুটপাট, বিচার হবে দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ বছর ২ মাস অতিবাহিত হবার পরেও আমরা বিগত শাসনামলের দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের তালিকা ও তাদের সম্পদের তথ্য এবং তাদের বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন ভূমিকা দেখতে পাইনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন। লুটেরাদের বিচার সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়গুলো ঝুলে আছে সেই পুরাতন আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জালে। অর্থের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তির বিষয়টি কমিশনের বিরুদ্ধে অনেক পুরোনো অভিযোগ, যেই অভিযোগ থেকে এখনো মুক্তি নিতে পারেনি কমিশন। বিভিন্ন দলীয়, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক চাপের মুখে নতি স্বীকারের চিত্রও অগনিত। দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও এর কর্মকর্তারা এটিকে সব সময়ই রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে পরিচালনা করেছেন। যার ফলে এটি একটি মেরুদন্ডহীন পরাধীন কমিশনে রুপান্তরিত হয়েছে।
জুলাই মঞ্চ- People Against Genocide বাংলাদেশে সম্পুর্ণ রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন একটি দুর্নীতি দমন কমিশন চায়। যেটি কোন চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না। পাশাপাশি আমরা বিগত শাসনামল ও বর্তমান সময়ে গড়ে ওঠা দুর্নীতবাজ রাজনৈতিবিদ, আমলা ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি সঠিক তদন্ত ও তাদের তালিকা চায়। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হচ্ছে কমিশন সেটাস জানতে চায়। দুর্নীতিবাজদের সাথে আতাত করে কমিশনের কারা লুটেরাদের দায়মুক্তি দিতে কাজ করতো তাদের খুজে বের করে চাকরিচ্যুতি ও বিচারের মুখোমুখী করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দয়ে সরকারী অফিস গুলোকে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ নজদারিতে আনতে হবে। যে কোন হস্তক্ষেপ জনগণের কাছে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দুর্নীতি রোধে যদি এই কমিশনটি স্বাধীন ভাবে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে তাহলে এই বাতির নীচে অন্ধকার কমিশন বাংলাদেশর দুর্নীতি প্রতিরোধে কোন দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে করে জুলাই মঞ্চ- People Against Genocide.
জুলাই মঞ্চের ধর্ষণ প্রতিরোধ ও নারী নিরাপত্তা প্রতিনিধি সুরাইয়া আন্তার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মঞ্চের সামাজিক সুরক্ষা প্রতিনিধি তাসমিয়া রহমান, লিয়োজো প্রতিনিধি নিজাম উদ্দীন, গণমাধ্যম প্রতিনিধি নাইম আল ইসলাম, প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক খোক্ন মিয়া, মিজানুর রহমান শেখ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আহবায়ক হারুনুর রশীদ প্রমুখ।