বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি হলো ‘টানা-হেঁচড়া‘ পরিস্থিতি। একটা পক্ষ বলতেছে নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গণভোট জুলাই সনদ এইসব কি আমরা বুঝি? বুঝি না। এইসব বুঝে শিক্ষিত উঁচু তলা থেকে আসা কিছু লোক। তারা এসে আমাদের ঘাড়ের উপর এসব চাপা‘েছ। বিএনপি যতগুলো পরিবর্তন বা সংস্কার করতে চায়, সেগুলোর সঙ্গে তারা রাজি আছেন। তবে ‘যেটা রাজি হবো না সেটা পার্লামেন্টে যাবে। পার্লামেন্টে গিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে, ভোটাভুটি হবে, সেখানে পাস হবে। গতকাল রোববার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর বালিকা উ‘চ বিদ্যালয় মাঠে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ‘পালিয়ে যাওয়া‘ প্রমাণ করেছে যে তাঁর দলের কর্মী এবং দেশের জনগণের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্রও দরদ ছিল না। তিনি কর্মীদের অসহায় অবস্থায় রেখে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মাটিতেই আমাদের জন্ম, এই মাটিতেই আমরা থাকি , এখানেই সুখ-দুঃখের সঙ্গে বাঁচি এবং মরলে এই মাটিতেই মরবো। দেশের মাটি ছেড়ে কখনো যাবো না।
নিজের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি বহু কষ্ট করেছি। আপনারা জানেন যে আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি। পুলিশ আমাকে সেই সেলে পাঁচ দিন আটক করে রেখেছিল, যেই সেলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদেরকে রাখা হয়। আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছি। তিনি তার দলের চেয়ারপারসন প্রতি ঘটে যাওয়া ‘অন্যায়‘ এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ বছর বিনা দোষে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আর আমাদের ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।‘
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন উপস্থিত। এটাই আমার শেষ নির্বাচন। আর হয়তো সময়, সুযোগ হবে না। এই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিবেন তো? এবার ভোট ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তো? সবাই ভোট দিতে পারবেন তো?‘ কর্মীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার মার্কা কয়টা? মার্কা একটা দেখতেছেন ধানের শীষ, নৌকাটা এবার দেখা যা‘েছ না। আরেকটা দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লাও এবার ইলেকশন করবে। সুতরাং, আপনাদের নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ও ধানের শীষের মধ্যে বেছে নিতে হবে প্রার্থী।‘
দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও সাধারণ মানুষের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ধানে-আলুতে এবার মার খেয়েছে কৃষক। আলু হিমাগার থেকে আনতেছে না, তার মানে কৃষি কাজ করে লাভবান হতে পারছেন না।‘ তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার মানুষের কষ্ট বোঝে না। বিএনপি সরকারে এলে কৃষকদের এবং মা-বোনেদের সুবিধা দেওয়ার জন্য দুটি বিশেষ কার্ড চালু করা হবে। সব বাড়ির মায়েদের কাছে একটি করে কার্ড থাকবে। এই কার্ডের মাধ্যমে মায়েরা ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। প্রতিটি কৃষকের কাছে এই কার্ড থাকবে। এর মাধ্যমে কৃষক ন্যায্য মূল্যে সার, বিষ, সেচের পানি এবং তার ফসলের ন্যায্য বাজার করতে পারবেন।
গণহত্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাইতে গণহত্যা হয়েছিল ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও গণহত্যা হয়েছিল। এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য একটাই—তখন পশ্চিম হানাদার বাহিনী পাকিস্তানিরা আমাদের এখানকার কিছু লোকজনকে নিয়ে তারা এই গণহত্যা করেছিল আর এইবার শেখ হাসিনা তার প্রশাসনকে দিয়ে আমাদের ছেলেগুলোকে মারছে।‘
এ সময় জেলা, উপজেলা, বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর থানা সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ দিলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।