পতিত ফ্যাসিস্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশে জনগণের মাঝে নানা গুজব ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় একটি খালের পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করে জনগণকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেক গুজব চারদিকে। গুজবে কান দেবো না। কারণ গুজব গুজবই। আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য আওয়ামী লীগ ওই ভারতবর্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমানে গুজব ছড়াচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নাই। আমাদের মধ্যে ঐক্য আছে, সেই ঐক্য নিয়ে আমরা জয় করব ইনশাআল্লাহ।

রাজধানী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিকালে উত্তরার ১২ সেক্টরে একটি খাল এবং দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সকালে মানিকনগরের খালের ময়লা-আবর্জনার পরিষ্কার অভিযান পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিএনপি র‌্যালির পরিবর্তে খাল-ডোবা পরিষ্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার আমাদের র‌্যালি হওয়ার কথা ছিলো। র‌্যালি হলে রাস্তায় ভিড় হয়ে যায়, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ হয়ে যায়, ঢাকা শহর বন্ধ হয়ে যায়, মানুষের কষ্ট হয় এই কথা চিন্তা করে আমাদের নেতা তারেক রহমান বললেন, ঢাকা শহরে দুইটা অঞ্চলে দুইটা খাল আপনারা বেঁছে নেন যেটা আপনারা পরিষ্কার করবেন। সেইভাবে আমাদের নেতাদেরকে বলেছি সেইভাবে এই কর্মসূচি হচ্ছে। আমার একটা অনুরোধ আছে নেতাদের কাছে। সেটা হচ্ছে, আজকে পাঁচ মিনিটের জন্য দেখিয়ে চলে গেলে হবে না, পাঁচ মিনিটের জন্য আমরা দেখলাম যে, আমরা পরিষ্কার করতেছি, তারপরে নাই। এই খাল আমরা দেখতে চাই যে পরিষ্কার হয়েছে এবং নেতা-কর্মীরা পরিষ্কার করেছে। এখানে বুঝা যাবে যে, আপনাদের দলের প্রতি দরদ কতটা।

তিনি বলেন, নেতাদের স্যুট-কোট পড়ে আসলে হবে না, কারা পড়ে আসছে? স্যুট পড়ে কি খাল পরিষ্কার করা যাবে? যাবে না, পায়জমা পড়েন, হাফ পেন্ট পড়েন, পড়ে সবার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতায় নামতে হবে। মহিলা নেত্রীরা কেউ কেউ সাঁজ-গোঁজ করে পার্লার থেকে আসছেন আমি দেখতে পারছি। এই প্রোগ্রামে হবে না, হাঁটতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপির কথা বলতে হবে। জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের কথা বলতে হবে, আমি কি কথাগুলো ভুল বলেছি ভাই?

কোথাও গোলযোগ করা যাবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল সবার আগে নেতৃত্ব নিতে হবে। কোথাও কোনো গোলযোগ করা যাবে না। বিশেষ করে নির্বাচনগুলো হচ্ছে ছাত্র সংসদগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সেখানে যেন কোন গোলযোগ সৃষ্টি না করি। কোথাও যেন এই বদনাম না আসে বিএনপির বিরুদ্ধে। আপনারা বড় দল আপনাদের দায়িত্ব বেশি, তাই না!

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তো দায়িত্ব এসেই পড়ছে আপনাদের কাছে। পাড়ায় মহল্লায় কোন গোলযোগ-টোলযোগ হলে আপনাদের কাছেই লোকজন আসে মিটমাট করে দেয়ার জন্য। পুলিশ ভাইয়েরা ওই দূরে থাকে তাদের বললে, বলে যে, আপনাদের ব্যাপার আপনারা বুঝেন। কারণ অপকর্ম করছে অনেক, তাই না! এখন আর অপকর্ম করতে দেয়া যাবে না। আমরা পুলিশকে আহ্বান জানাই, অতীতে যা খারাপ কাজ করছেন তো করছেন, এখন দয়া করে ভালো হয়ে যান, সিদা হয়ে যান, জনগণের সঙ্গে থাকেন। তাহলে আপনাদেরকে সবাই ভালোবাসবে।

এই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামানসহ মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে খাল পরিষ্কার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।

এর আগে বেলা ১২টায় রাজধানীর পুরনো ঢাকায় দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী খাল-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। পরে তিনি নিজে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেতা-কর্মীদেরসহ নামেন।

এ সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, জাসাস জাকির হোসেন রোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের লিটন মাহমুদ, আব্দুস সাত্তার, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নুরকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল : এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নুরকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, যারাই তাকে আঘাত করুক হত্যার উদ্দেশ্যেই আঘাত করা হয়েছিল। এটা খুব পরিষ্কার।

তিনি বলেন, নুরের অবস্থা আগের চেয়ে ইমপ্রুভ কিন্তু ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে। তার যে জায়গাগুলোতে ইনজুরি হয়েছে সেই জায়গাগুলো খুব ফ্যাটাল। তার ব্রেনেও ইনজুরি হয়েছে, ব্লিডিং হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পেরেছি, এখানে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হয়নি। সে এখনো খেতে পারছে না তাকে পাইপ দিয়ে লিকুইড খেতে হয়। তার রিকভারি হতে সময় লাগছে, তাকে দেশের বাইরে পাঠানো দরকার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অভ্যুত্থানের পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি আমাদের নেতাদের ওপর এভাবে আক্রমণ করে তাহলে সাধারণ মানুষকে কি করছে চিন্তা করেন। এটা আমি কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। প্রধান উপদেষ্টা বিচার বিভাগীয় যে তদন্ত দিয়েছেন সেটা দ্রুত শেষ করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকারের কাছে বলছি, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো উচিত।

এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় তিনি ভিপি নূরের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। নূর যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, সে জন্য তার চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিকিৎসকদের অনুরোধ জানান।