শ্রমিকেরা সবচেয়ে নিপিড়ীত জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর গণমানুষের নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিগত ৫৩ বছর যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, তারা শ্রমিকদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তথাকথিত শ্রমিক সংগঠনের নামে ঐসব সংগঠনের নেতারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। এজন্য তারা শ্রমিকদের শোষণ করেছে। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মালিক-শ্রমিক সেতুবন্ধন সৃষ্টির কাজ করেছে। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রমিকদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর শাখা কর্তৃক আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের অপরিহার্য শক্তি হচ্ছে শ্রমিক জনগোষ্ঠী। শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দিলে রাষ্ট্রের সব সেক্টর বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাষ্ট্র ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে। অথচ সেই শ্রমিকদের কল্যাণে আজ পর্যন্ত কোন সরকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেনি।
চলমান শ্রমনীতি বাতিল করে শ্রমিক বান্ধব শ্রমনীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে 'শ্রমনীতি সংস্কার কমিশন' গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে মালিক-শ্রমিকের সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। ফলে কোন সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাত, লুটপাট, শোষণ থাকবে না। শ্রমিকদের অবদান তুলে ধরে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে শ্রমিক জনগোষ্ঠী। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ সংখ্যায় শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ছাত্রদের নেতৃত্ব জাতি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে মন্তব্য করে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও সরকার ৮ মাসেও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন পর্যন্ত শহীদদের তালিকা করে শহীদদের জাতীয় উপাধি এবং শহীদ পরিবারকে সম্মানজনক সহায়তা না করে উদাসীনতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যার কারণে ছাত্ররা ৮ মাস পর আবার রাজপথে নেমে এসেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা ছাত্রদের দাবি গণমানুষের দাবিতে রূপ নিয়েছে। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ করে তাদের পরিচালিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের বুকের ভাষা বুঝতে কালক্ষেপণ হলে সরকারেরই বেশি ক্ষতি হবে।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের উপর একটি দল এখন হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রদের ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তারা নিশ্চিত ছাত্র- জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করতে পারবে না। এজন্য তারা কখনো কখনো দাবি করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড তারা। আবার কখনো কখনো দাবি করে শহীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শহীদ তাদের দলীয়। অথচ জুলাই আন্দোলন চলমানকালে তাদের দলের প্রধান বলেছে, ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে তার দলের কেউ জড়িত নাই। সেই সব অডিও, ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে এখনো আছে। নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রশ্ন রেখে বলেন, কতজন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন?- কতজন আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী পাশে দাঁড়িয়েছেন?- সেই তথ্য জাতির সামনে পরিস্কার করুন। জামায়াতে ইসলামী প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসায় সার্বিক ব্যবস্থা করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করতে দিবে না জামায়াতে ইসলামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য ১০ খন্ডে জুলাই স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। আরো কাজ চলমান আছে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় এই স্মারক রচনা করে বিশ্ব বাসীকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস জানানো হবে।
রাজশাহী নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সব আন্ত:নগর ট্রেন চালুর দাবি পূরণের জন্য রেল উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশের অর্থনীতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সামগ্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আঞ্চলিকতার বৈষম্য দূর করে দেশের সব জেলা ও অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
অতীতে যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ বার এমপি হয়েছে, ৩ বার এমপি হয়েছে বলে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছে তাদের উদ্দেশ্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এমপি হয়ে জনগণের জন্য কি করলেন? - কেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন মেডিকেল কলেজ হয়নি?- কেন গ্যাস সংযোগ আসেনি?- কেন সোনা মসজিদ পর্যন্ত সড়ক ফোর লেন হয়নি, কেন আন্তঃনগর রেল একটা থেকে আর বাড়েনি?- এমপি হয়ে যদি জনগণের জন্য কিছুই করতে না পারেন তবে জনগণের কি লাভ হলো প্রশ্ন রেখে তিনি কাঁদা ছোড়াছুড়ি পরিহার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীর উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর সভাপতি মো. এনায়েতুল্লাহ'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ শতশত শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।