নানা আয়োজন ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দলের প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করছে বিএনপি। এছাড়া তার রুহের মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল, দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ, চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ ৮ দিনের কর্মসূচি পালন করছে দলটি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যদের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এই দিনকে ‘শাহাদাৎ’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি।

৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে সিনিয়র সদস্যসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারস্থলে আসেন। পুষ্পমাল্য অর্পণের পর মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দেশের ‘এক ব্যক্তিই চান না’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনুস (প্রধান উপদেষ্টা) জাপানে বসে বিএনপির বদনাম করছেন। একটু লজ্জাও লাগলো না দেশের সম্পর্কে বিদেশে বসে বদনাম করতে। তিনি বললেন, একটি দল নির্বাচন চায়। আর আমরা বলতে চাই, একটি লোক নির্বাচন চায় না, সে হলো ড. ইউনূস, উনি নির্বাচন চান না।

নির্বাচন ডিসেম্বরেই, জুনে নয় ঘোষণা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে এবং এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস স্বয়ং বলেছেন। আমরা বলি নাই, তারই প্রস্তাব। পরবর্তিতে তিনি শিফট করে চলে গেলেন জুন মাসে। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন কখনো বাংলাদেশে হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। তিনি বলেন, আর নির্বাচন যদি করতে না চান সেটা ইউনূসের দায়-দায়িত্ব, আমাদের দায়-দায়িত্ব নয়। জাতি-জনগণ এই নির্বাচন আদায় করবে, নইলে এদেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ঠিক থাকবে না।

মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে জাতিকে বিভিন্ন কারণেই। জিয়াউর রহমান বহু সংস্কার করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেন নাই। আজকে এই সরকার কিছু বিদেশী লোককে আমদানি করেছেন দেশে সংস্কার করার জন্যে। এখন সংস্কার করতে করতে এমন জায়গায় চলে গেছে যে, তারা নির্বাচন দিতে চায় না।

এর আগে মির্জা আব্বাস দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সাল্হা উদ্দিন আহমদ, এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে আসেন। তারা শ্রদ্ধা জানানোর পরে কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং এরপর মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।

নয়াপল্টনে শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে আর কখনো এ দেশে নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, টালবাহানা করে নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করবেন না। আমরা খুব ভালো জানি, ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে এ দেশে আর কখনো নির্বাচন হবে না। এই বাংলাদেশ বিদেশী প্রভুদের হাতে পদানত হবে।

গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিএনপির পল্টন থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর-দক্ষিণ) শাখা জিয়াউর রহমানের স্মরণে এই দোয়া মাহফিল ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা মীর নেওয়াজ আলী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন সহ মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাতির মধ্যে আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং জাতির প্রত্যাশার ওপর আমরা আমাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছি। গতকাল দুপুরে হাইকোর্টের মাজারগেটে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে তবারক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বেলা সাড়ে ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে গতকাল গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেট এলাকায় থানা বিএনপি আয়োজিত দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক সময়ে বর্তমান সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার বলেছিল তারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, সেটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক সময়ে বর্তমান সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে।

জানা গেছে, খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি শুধু গুলশান এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। বাসাবো খেলার মাঠ, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠ, ধানমন্ডি কেএফসি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর সুচনা কমিউনিটি সেন্টার, আদাবর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্পটে দিনব্যাপী দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। আগামী ছয় দিন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।