আহসানুল হক জুয়েল নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে : বিএনপি'র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এডভোকেট ফজলুর রহমানকে সতর্ক করে এবং বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে এক লম্বা স্ট্যাটাস দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া।

তিনি বলেন, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে অনতিবিলম্বে ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূমিকা এবং বক্তব্যের বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ বলে আমি সহ আমার মত লক্ষ কোটি নেতা কর্মী সমর্থক মনে করে। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত বড় ধরনের ভোট বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

আজ বুধবার (৯ই জুলাই) বেলা ১০ টায় তার নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি এ মন্তব্য করেন ।

এর আগে কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্র দলের সভানেত্রী নুসরাত জাহানসহ সারাদেশের অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন।

সংগ্রাম পাঠকদের জন্য বিএনপি নেতা হাজী ইসরাইল মিয়ার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

“প্লীজ! ভাই এবার থামুন।

অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আপনাকে অনুরোধ করে বলছি আপনি এবার থামুন। আপনি ভালো বলতে পারেন সেটা কিশোরগঞ্জ সহ দেশবাসী ভালো করেই জানেন। এটা আপনার গুণ। আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এর জন্য আপনাকে সহস্যবার স্যালুট করি। কিন্তু আপনার সাবেক দলের নেতার প্রতি দেওয়া অতিভক্তিপূর্ণ বক্তব্য এখন মানুষের সহ্যসীমা লংঘন করছে। আপনি যাকে দেবতূল্য বানাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনিই এই সর্বপ্রথম জাতীর সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে চরম দুঃসময়ে সমগ্র নিরস্ত্র জাতিকে অস্ত্রের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজের এবং পরিবারের সবাইকে সুরক্ষা করেছিলেন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমে কেনা স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের কবর রচনা করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিলেন। মানুষের ভোট এবং ভাতের অধিকার হরণ করেছিলেন। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা রহিত করেছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সভা সমাবেশ প্রতিবাদ প্রতিরোধের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে এক নেতার এক দেশ এই জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

বিশেষ করে আলেম ওলামদের বিশদগার তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে জাতিকে হতাশ করছেন। ২৪ এর ছাত্র গণ আন্দোলনের বিরূদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে এর নেতৃত্বকে চরমভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ অকথ্য গালাগাল করছেন এবং দলের অবস্থানের সাথে দূরত্ব তৈরীর পথ সুগম করছেন। আমার জানামতে আমার দলের ষ্ট্যান্ডের বাইরে গিয়ে মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যারা জন্মের পর থেকে বিএনপি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসছেন সেই ভোট ব্যাংকে চরম আঘাত এবং ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন।

বিএনপির দ্বায়ীত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে অনতিবিলম্বে ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূমিকা এবং বক্তব্যের বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ বলে আমি সহ আমার মত লক্ষ কোটি নেতা কর্মী সমর্থক মনে করে। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত বড় ধরনের ভোট বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সময় থাকতেই সাবধান হওয়া উচিৎ বলে মনে করছি বিধায় এই লেখার অবতারনা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী গণতন্ত্রবিরোধী ধর্মবিরোধী এবং অতি সম্প্রতি সংগঠিত ২৪ এর ছাত্র গণ আন্দোলনের বিরোধী শক্তি নই। সকল কিছুর সমন্বয়েই আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়নেরও জন্য আমাদের রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতিক দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের উপর শতভাগ আস্হাশীল হয়ে রাজপথে ছিলাম, আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ।”

উল্লেখ্য এডভোকেট মোহাম্মদ ফজলুর রহমান কিশোরগঞ্জ সংসদীয় আসন ৪ এর (ইটনা- মিঠামইন- অষ্টগ্রাম) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী বলে জানা গেছে। সম্প্রতি গত কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জনসভা সহ অন্যান্য সভা সেমিনারে টেলিভিশন টকশোতে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদান করে নিজ দল বিএনপি'র বাইরে নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ প্রীতি দেখানোর কারণে সারা বাংলাদেশে তার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছে তিনি কি আসলে বিএনপি করেন নাকি আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন।

তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও দলটির সাবেক এমপি ছিলেন।