গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে এখন থেকে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ততপরতা ততই বাড়ছে। তবে ইতিমধ্যেই বড় দুটি দলের প্রচারনা চোখ পড়ার মতো । বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ডা. মঈনুল হাসান সাদিক এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন জামায়াত প্রার্থীই বিজয়ী হবেন।

ডা. মঈনুল হাসান সাদিক নিজ দলের অভ্যন্তরে বিভাজন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ আসনে বিএনপির ভোট অনেক কম। জামায়াতের লেবু মাওলানা যিনি এর অগে একাধিকবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে করেছেন। সেই নির্বাচন গুলোতে তিনি যে ভোট পেয়েছেন তা কোনো অংশেই কম নয়।

ডাঃ মইনুর হাসান সাদিক যেখানে ঘরে বাইরে লড়াই করছেন সেখানে তার বিপরীতে লেবু মাওলানা নির্ভার হয়ে মাঠে ময়দানে গণসংযোগ করে তার ভোটের ব্যাংক ভারী করে চলেছেন।। এদিকে তিনি ২০১৪ সালের ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি পলাশবাড়ী উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রে প্রথম হয়েছিলেন। অনেক ষড়যন্ত্র করেও আওয়ামীলীগ সরকার তার বিজয়কে দমাতে পারে নাই। তখনকার তুলনায় মাওলানা নজরুল ইসলাম এখন অনেকটাই বেশি জনপ্রিয় এবং তার কর্মীবাহিনী তাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডাঃ মইনুল হাসান কোনো নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন এই রকম কোনো নিবন্ধিত ভিত্তি নাই।

গাইবান্ধা-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামী একটি ধারাবাহিক এবং উল্লেখযোগ্য ভোট-ভিত্তি তৈরি করেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দলটির প্রার্থী আবুল কাওসার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ৩০,২৬৪ ভোট পেয়েছিলেন, যা মোট ভোটের ১৭.২% ছিল। এটি সেই সময়ের আসনটির জয়ী প্রার্থী ফজলে রাব্বি চৌধুরীর ভোটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্মিলিত ভোটের প্রায় অর্ধেকে ছিল। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে, জামায়াতের এই প্রার্থীর ভোট বেড়ে ৬৯,০২২-এ পৌঁছায়, যা মোট ভোটের ২৮.৬% ছিল । যদিও তিনি পরাজিত হয়েছিলেন, তার ভোটের হার ১৯৯১ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জামায়াত ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তাদের ভোট-ভিত্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যেখানে তাদের প্রার্থী ৭৬,৪৬০ ভোট পেয়েছিল, যা মোট ভোটের ২৭.০% ছিল । এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, জামায়াতে ইসলামী এই আসনে একটি প্রতিষ্ঠিত বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে।

ঐতিহাসিকভাবে, গাইবান্ধা-৩ আসনে বিএনপির নির্বাচনী পারফরম্যান্স জামায়াতের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহ বদরুল ইসলাম মাত্র ৯,১২১ ভোট পেয়েছিলেন, যা মোট ভোটের ৫.২% ছিল। এই ভোট সংখ্যা জামায়াতের প্রাপ্ত ভোটের এক-তৃতীয়াংশেরও কম ছিল। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, এই আসনে বিএনপি কখনোই একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। তাদের ভোট-ভিত্তি সীমিত এবং জামায়াতের মতো সমমনা দলগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এই ঐতিহাসিক ভোট প্রবণতা জোট রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যেখানে জামায়াত মূলত এই অঞ্চলের প্রভাবশালী বিরোধী শক্তি।

জামায়াতের অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু একজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নেতা । তার রাজনৈতিক পরিচিতি তার দলের শক্তিশালী ঐতিহাসিক ভোট-ভিত্তির সাথে যুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যেখানে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকদের পাশাপাশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।