জাতীয় গণতান্ত্রিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলেও সবকিছু সংস্কার করতে পারবে না। তবে দলিত সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য অনেক কাজ এই সরকার করতে পারে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘সংস্কার ও রাষ্ট্র ভাবনায় হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠী’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। সেমিনারের আয়োজন করে হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, বৈষম্য দূর করতে হলে বিভিন্ন চাকরিতে যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্র কর্তৃক হরিজন জনগোষ্ঠীর নিয়োগ বাড়াতে হবে। শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূর করতে মিডিয়া-ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
এ সময় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিজয়কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়া নয়, বরং তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সমাজ কল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদের সঙ্গে কথা বলব এই ২টি মন্ত্রণালয় থেকে আরও কী কী সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন মানে কোটা বাতিল নয়। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা আবশ্যক। এই জনগোষ্ঠীর নারী-শিশু সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত। চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল হত্যা মামলার দ্রুত সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বান্ডেল হরিজন কলোনিতে যারা নির্বিচারে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের জামিন আবেদনের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, সারাদেশে বসবাসরত হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা কত তার কোনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে নেই। এর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলিতদের কোনো কমিশন গঠন করেনি, যা অত্যন্ত প্রয়োজন। অধিকার আদায় করতে হলে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে লড়াই গড়ে তুলতে হবে।
সেমিনারে নিবন্ধ পাঠ করেন সুরেশ বাসফোর। তিনি সারাদেশের হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাজু বাসফোরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণালাল, হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের উপদেষ্টা লিটন বাসফোর, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের সভাপতি উৎপল বিশ্বাস, হরিজন ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু হরিজন প্রমুখ।