’৫২-এর ভাষা আন্দোলন জাতি হিসাবে আমাদের জন্য গর্বের এবং প্রেরণার উৎস’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের কাউন্সিল হলে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ভাষা আন্দোলনের কথা আসলে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি কথা উঠলেও এর পেছনেও রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম দাবি ওঠে বৃটিশ শাসনামলে ১৯১১ সালে। মূলত, রংপুর শিক্ষা সম্মেলনে নওয়াব আলী চৌধুরী বৃটিশ সরকারের কাছে প্রথম এ দাবি উপস্থাপন করেন। এরপর ১৯১৮ সালে শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ দাবির প্রতিবাদ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার জোরালো দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৩৬ সালে একই দাবি উত্থাপন করেন মাওলানা আকরাম খাঁ। ১৯৪৬ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য জিয়াউদ্দীন উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করলে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের প্রতিবাদ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জোরালো দাবি করেন। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান উর্দ্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে জনগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে।

ভাষা আন্দোলনে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সম্পূখ সারির নেতা। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর নির্বাচিত জিএস হিসাবে লিয়াকত আলী খানের কাছে স্মারক লিপিও পেশ করেছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বারবার গ্রেফতার, কারাবরণ ও কলেজের চাকুরী হারিয়েছিলেন। কিন্তু হীনমন্যতার কারণে তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি বরং ডাকসুর জিএসদের নাম ফলক থেকে তার নাম মুুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ফলক থেকে নাম মুছে ফেলেই দেশ, জাতি ও ভাষা আন্দোলনে তার অবদান মুছে ফেলা যাবে না। তিনি হীন্যমনতা পরিহার করে সরকারকে অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতি নতুন দিশা পেলেও দেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি। এমন দিশা আমরা ১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর পেয়েছিলাম। সেদিন সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে আধিপত্যবাদ মুক্ত করেছিলো। কিন্তু সে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। বিগত প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দেশ ও জাতির ঘাড়ে আওয়ামী স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিলো। দেশকে পরিণত করা হয়েছিলো জুলুম- নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ এবং দুর্নীতি-লুটপাটের অভয়ারণ্যে। কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতাদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের পরও আজও বৈষম্য দূর হয়নি। সকল রাজবন্দী মুক্তি লাভ করলেও অসুস্থ জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। তিনি আবিলম্বে জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোনের মাধ্যমে জনগণ দাবি আদায় করেই ছাড়বে।

হামিদ আযাদ বলেন, আওয়ামী- ফ্যাসিবাদীরা পতনের আগের রাষ্ট্রের সকল অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে অর্জিত বিপ্লব ও বিজয় ব্যর্থ হবে। তাই সবার আগে দরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন। একই সাথে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে। বিশ্বের ৬২ টি দেশে এ পদ্ধতি চালু আছে এবং তারা এর সুফল পাচ্ছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে দক্ষ সাংসদের মাধ্যম সংসদ সমৃদ্ধ হবে। তিনি সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপশাসন ও দুঃশাসন মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলকে একদফায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম হলেও তাকে অবমূল্যায়ন করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে ‘২১ পদক থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি সকল প্রকার হীনমন্যতা পরিহার করে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।

মহেশখালী উপজেলার শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়: রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত মহেশখালী উপজেলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক প্রাণবন্ত শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে'।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টায় ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে বিশিষ্ট ব্যাংকার শহিদুল ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা র দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী - কুতুবদিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, 'সমাজে যখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন প্রতিটি মানুষ তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। শোষণ, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মূল কারণ হলো দুর্নীতি, বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সামাজিক বৈষম্য। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে সৎ নেতৃত্ব ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মহেশখালী বর্তমানে একটি অবহেলিত দ্বীপ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মহেশখালীকে আধুনিক উপজেলা হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। আগামীতে জনগণ আমাকে তাদের সেবা করার দায়িত্ব দিলে বদরখালী দিয়ে যেমন মহেশখালীর সংযোগ সেতু রয়েছে তেমনি নতুন সেতু নির্মাণ করে কক্সবাজারের সাথেও গোরাকঘাটাকে সংযোগ করার ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে মহেশখালী- কুতুবদিয়ার মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম লবণ, পান, চিংড়ি শুটকি ও গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। পরিবেশ সংরক্ষণে পাহাড় ও প্যারাবন কাটার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মহেশখালীর কোন সন্তান যাতে পড়াশোনা শেষ করে কর্মহীন না থাকে সে দিকে আমার বিশেষ নজর থাকবে। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন এবং শিক্ষা, ক্যারিয়ার ও সমাজ উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে ‘কোরআন তেলাওয়াত’ করেন আল-শাহরিয়ার নূরশেদ। আবু হেনা মোহাম্মদ সাফা সানজিদের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসাম) সভাপতি আরিফুল ইসলাম বিজয় ও সাধারণ সম্পাদক এমরান খান। উইংসের সভাপতি এস্তাফিজুর রহমান খোরশেদ, ঢাবি শিক্ষার্থী রিমন শর্মা, শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন। তাদের বক্তব্যে মহেশখালী বিভিন্ন সমস্যার কথা, মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।

হামিদুর রহমান আযাদ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি, স্থানীয় সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাই তাদের শিক্ষা অর্জন এর পাশাপাশি মানবিক মর্যাদা ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।