দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে চায় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের সব চেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে, যে ঘোষণা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে, সেটির আয়োজন করা। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়। সবাই সরকারের ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে উত্তরার আজমপুরে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির ওপর সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের সংবাদকে দেশের জন্য ভালো খবর অভিহিত করে এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করবো তার ওপরে ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স নিয়ে নিবে। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ৫০ টাকা ওটার সাথে আরো ৩৫ টাকার যোগ হবে, তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না। ওটাকে (যুক্তরাষ্ট্র ট্যারিফ) আমাদের পররাষ্ট্র দফতর এবং উপদেষ্টারা আলোচনা করে কমিয়ে ২০% পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে.. অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, অভিজ্ঞতা নাই বেশি। আমি আশা করেছিলাম যে, এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে প্রকৃত তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য তারা পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে। এই যে সংস্কারের যে বিষয়টি সেটি গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, দুই একদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।
উত্তরার আজমপুরে আমির কমপ্লেক্সের সামনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার সমস্যা হলো আমি কার কাছে যাবো? কোন এমপি নাই, তাহলে আমি যাব কার কাছে। আমার সমস্যা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? এইজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।
লুটেরাদের সঙ্গে কোনো আপোষ নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভয়ঙ্কর একটা ফ্যাসীবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদেরকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব। যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজী করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপোষ থাকবে না। তাদেরকে আমরা কখনোই স্বীকার করবো না এবং তাদেরকে আমরা কোন মতেই সামনে আসতে দেবো না।
অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান দেশে আসবেন এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার উপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ একইভাবে আজকে তারেক রহমানের উপর আস্থা রাখছে। আমরা অপেক্ষা করছি, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যে তারেক রহমান অতি দ্রুত দেশে আসেন আমাদেরকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন সেটাই আমাদের কামনা।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বারবার প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছেন। তিনি বলছেন যে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবো। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে, সাধারণ গরীব মানুষ গরীব থাকবে না, আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যাবে এবং বারবার করে বলেছেন যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগামীতে তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছেন তার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।
এক বছর আগে এই দিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিলে উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদী পতনের আন্দোলনের শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের, শহীদদের পরিবারের বেদনা-কষ্টের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।