নতুন বাংলাদেশের ভিত্তিকে মজবুত করতে ৭ দফা উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ’ হলেই ছাত্র-জনতার আত্মদানে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা যাবে। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো গুলো বিগত সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জানমালের হেফাজত করতে নব্য ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করতে হবে। চাঁদাবাজি আর খুনাখুনির জন্য একটি দলের প্রতি জনসাধারণের ঘৃণা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তাই মানুষ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়। মানুষ এবার সৎ, যোগ্য, আর্দশিক, নৈতিক ও মানবিক নেতৃত্বের বাংলাদেশ চায়। জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে সৎ, যোগ্য, আর্দশিক, নৈতিক ও মানবিক নেতৃত্ব।

রোববার রাতে পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকার পরিবর্তে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রাখছে। মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীকে চাঁদার জন্য হত্যা করা হয়েছে বলে ঐ ব্যবসায়ীর পরিবার জানালেও পুলিশ তদন্তের আগেই ঘোষণা দিয়েছে, চাঁদার জন্য নয়; ব্যবসায়ীক বিরোধে হত্যা করা হয়েছে! অপর দিকে নিহত ব্যবসায়ী সোহাগের স্ত্রী জানিয়েছেন সোহাগকে হত্যা করার সাথে সরাসরি জড়িত ৩ জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিয়ে নিরপরাধ ৩ জনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এমনটি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনামলে চলেছে এখনো চললে সেটি মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসন কোন দলের পক্ষে অবস্থান নিলে জনগণ সেটি মেনে নিবে না। প্রশাসন চেহারা দেখে দেখে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এজন্যই জামায়াতে ইসলামী ৫ আগস্ট পরবর্তী বারবার বলে আসছে, পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা সহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করতে হবে। সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন দিলে সেটি অতীতের মতো সমঝোতা আর নীলনকশার নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, এজন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহনের ১১ মাস পরে জামায়াতে ইসলামী জনগণের ৭ দফা দাবি উত্থাপিত করেছে। এই দাবি গণমানুষের দাবি। জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি। এই দাবি আদায় হলেই সত্যিকারের জনগণের সরকার গঠন হবে। এজন্য ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশে দেশবাসীকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন করতে তিনি আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকটে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, বড় দল দাবি করা দলটি দিনদিন ছোট হচ্ছে। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে খুন করেছে। খুনের এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। যেভাবে চাঁদাবাজি চলছে এভাবে আরো কিছু দিন চললে দলের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ একদিকে নিজেদের নিজেরা খুন করে সদস্য সংখ্যা কমানো হচ্ছে, অপরদিকে প্রতিদিনই বহিস্কার চলছে। এছাড়াও অনেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিকে সমর্থন জানাতে না পেরে পদত্যাগ করছে। আওয়ামী লীগ ১৭ বছরে যা করেছে, এই একটি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তারচেয়ে বেশী অপকর্ম করেছে। তাদের অপকর্মে দেশবাসী অতিষ্ট হয়ে এখন তাদের পতন যাচ্ছে। জনগণ রাস্তায় নামলে আওয়ামী লীগের পথেই এদেরও যেতে হবে। তারা কেন সংস্কার যাচ্ছে না?- কারণ সংস্কার হলে চাঁদাবাজি করতে পারবে না, সন্ত্রাসী করতে পারবে না, ট্রেন্ডরাবাজি, দুর্নীতি সব বন্ধ হয়ে যাবে। একারনে তারা সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন চায়।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, একটা দল একটি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার দায়ে তার দলের ১১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরও প্রশাসন কাকে খুশি করতে কিংবা কার চাপে বলে ঐ ঘটনায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের এমন বক্তব্যে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়। আগে আওয়ামী লীগ কোন ঘটনা ঘটলেই এক বাক্যে বলে দিতো এটি জামায়াত-শিবির করেছে। এমন বক্তব্য সবসময় পুলিশের মিডিয়া সেলে রেডি করে রাখা হতো। এখন আওয়ামী লীগ নাই তাহলে আওয়ামী লীগের মতোই কারা প্রশাসনের নিরপেক্ষতায় প্রভাব ফেলছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জনগণ সেটি জানে। জনগণকে আর ক্ষিপ্ত না করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে দেশপ্রেমের প্রমাণ দিন। নতুবা ৫ আগস্ট আবারো আসতে পারে, বারবার আসতে পারে। নব্য ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে ৭ দফার বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি ৭ দফা দাবি আদায়ে ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হতে ইউনিট দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।

পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি এডভোকেট মারুফুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পল্টন থানা সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মোস্তাফিজুর রহমান ও এনামুল হক। ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী খন্দকার আব্দুর রব, ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জরুল ইসলাম, পল্টন থানা কর্মপরিষদ যথাক্রমে আ.ফ.ম ইউসুফ, নজরুল ইসলাম মজুমদার, আল-আমিন রাসেল, মাওলানা এনামুল হক শামীম, সাঈদ জুবায়ের, মো. হাবিবুর রহমান, শামীম হাসনাইন, মোশাররফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও সম্মেলনে থানার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।