আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ৩৬টির মধ্যে ৩২টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস। গতকাল শুক্রবার বিকেলে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ একটি অভিজাত হোটেলে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে, নির্বাচনে ইসলামী ঐক্য ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন জোটভূক্ত হয়ে নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারেন বলেও উল্লেখ করা হয় ব্রিফিংয়ে।

প্রার্থী ঘোষণার আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতির বক্তৃতায় দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মো. সিরাজুল হক নির্বাচনের আগে বিগত ১৭ বছরের সকল প্রকার নির্যাতন, খুন-গুমের সুষ্ঠু বিচার, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার, প্রশাসনিক সকল কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রাখা এবং অবৈধ টাকা ও অস্ত্র উদ্ধার, পেশীশক্তি নিয়ন্ত্রণ এবং সকল ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজার রাখার দাবি জানান। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, দেশের সব বিভাগেই প্রার্থী ঘোষণা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খুলনার প্রার্থী ঘোষণা হলো। তবে ইসলামী জোট হলে সব দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কোন আসনে কোন দলের প্রার্থী থাকবে সে সিদ্ধান্ত হবে।

খুলনা বিভাগের ৩১টি আসনে খেলাফত মজলিস মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা-১ আসনে মাওলানা এমদাদুল হক, খুলনা-২ আসনে এডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, খুলনা-৩ আসনে এফ এম হারুন-অর-রশীদ, খুলনা-৪ আসনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, খুলনা-৫ আসনে মুফতি আব্দুল জব্বার আজমী, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা সোলাইমান হোসেন নোমানী, বাগেরহাট-১ আসনে মাওলানা খায়রুল ইসলাম হেলালী, বাগেরহাট-২ আসনে শায়খুল হাদিস আমিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বাগেরহাট-৩ আসনে মুফতি ফরিদ আহমদ হেলালী, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যাপক ইয়াকুব আলী তালুকদার, সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে ১, ২ ও ৪ আসনে কোন প্রর্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি কামাল উদ্দিন, মেহেরপুর-১ আসনে অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, মেহেরপুর-২ আসনে হোসাইন বাদশা, কুষ্টিয়া-১ আসনে মাওলানা শরীফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-২ আসনে মুফতি আবদুল হামিদ, কুষ্টিয়া-৩ আসনে অধ্যাপক সিরাজুল হক, কুষ্টিয়া-৪ আসনে মাওলানা আলী আশরাফ, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মো. মোখলেছুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে এডভোকেট মো. ইউনুস আলী, ঝিনাইদহ-১ আসনে মাওলানা আবু তালেব, ঝিনাইদহ-২ আসনে অধ্যাপক ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঝিনাইদহ-৩ আসনে প্রার্থীর ঘোষণা করা হয়নি। ঝিনাইদহ-৪ আসনে মাওলানা ওয়াজিউল্লাহ, যশোর-১ আসনে মাওলানা মাহাবুব উল্লাহ, যশোর-২ আসনে মাওলানা কামাল হোসাইন, যশোর-৩ আসনে মাওলানা হাফেজ আবদুল্লাহ, যশোর-৪ আসনে মাওলানা মনিরুজজামান, যশোর-৫ আসনে হাফেজ মাওলানা বিল্লাল হোসেন, যশোর-৬ আসনে মাওলানা শফিউল্লাহ, মাগুরা-১ আসনে ড. মাওলানা ফয়জুল ইসলাম, মাগুরা-২ আসনে ডা. শামসুজজামান, নড়াইল-১ আসনে হাফেজ মাওলানা জিন্নাত আলী, নড়াইল-২ আসনে মাওলানা আবদুল হান্নান সরদার। তবে বিভাগের অন্য ৫টি আসনেও পরবর্তীতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলেও প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে শুরুতেই আমরা জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহত ও অসুস্থদের সুস্থ্যতা কামনা করে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত জুলাই ঘোষনাপত্রে সংশোধন করতে হবে। আরও উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার অপচেষ্টা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে অসংখ্য নিরীহ আলেম-উলামা ও ছাত্র-জনতাকে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা, ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন, ২০২১ সালের মার্চ মাসে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে সংঘটিত বিক্ষোভে ভারতীয় তাবেদার সরকার গুলি চালিয়ে ২১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এসব গুরুত্বপূর্ণ ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা অতীব জরুরী। উপরোক্ত সংশোধনীগুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে না থাকলে তা হবে অপূর্ণাঙ্গ, অভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থি ও জাতির জন্য হতাশাজনক। আমরা অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধনের দাবি জানাই।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে বিগত ১৭ বছরের সকল প্রকার নির্যাতন খুন-গুমের সুষ্ঠু বিচার, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার, প্রশাসনিক সকল কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ টাকা ও অস্ত্র উদ্ধার, পেশীশক্তি নিয়ন্ত্রণসহ সকল ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড বজায় রাখার দাবী জানানো হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মাস্টার আব্দুল মজিদ, ফরিদপুর জোন পরিচালক মাওলানা নাসির উদ্দিন, খুলনা জেলা সভাপতি মাওলানা এমদাদুল হক, খুলনা মহানগর সভাপতি এফ.এম. হারুন অর রশীদ, যশোর জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ, বাগেরহাট জেলা সভাপতি মুফতি আমিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, নড়াইল জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হান্নান সরদার প্রমুখ।